বোনের বিয়ে, কিন্তু দাদা উপস্থিত নেই। এক বছর আগে কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদীদের সাথে লড়াই করতে গিয়ে দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন। কিন্তু সেই শহীদ জওয়ানদের বোনের বিয়ে দিতে তার সাথে দেশের সেবায় কর্মরত বাকী CRPF সঙ্গীরা দায়িত্ত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন, যেন তাদেরই বোনের বিয়ে। কনে কে কোনো ভাবেই বুঝতে দেন নি তাঁর শহীদ ভাইয়ের অভাব। এমন আবেগঘন মুহূর্তের সাক্ষী থাকল উত্তরপ্রদেশের রায়বেরেলি।
গত বছর জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে শহীদ হন শৈলেন্দ্র প্রতাপ সিং। শৈলেন্দ্র প্রতাপ, ২০০৮ সালে সিআরপিএফ-এ যোগ দিয়েছিলেন, তিনি বাহিনীর ১১০ তম ব্যাটালিয়নে পোস্ট -এ ছিলেন। তার কোম্পানি পোস্টেড ছিল জম্মু কাশ্মীরে। সেই সময় পুলওয়ামার লেথপুরে সন্ত্রাসীবাদীদের সাথে এক লড়াইয়ে গুলিবিদ্ধ হন শৈলেন্দ্র প্রতাপ সিং। শহীদ শৈলেন্দ্র এর মরদেহ বাড়িতে পৌঁছলে সবার চোখ ভিজে ওঠে। শহীদের শেষ যাত্রায় হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয়।
দেশের বৃহত্তম কেন্দ্রীয় আধাসামরিক বাহিনী ‘সিআরপিএফ’ (CRPF)। ‘সিআরপিএফ’ -এর জওয়ানরা তাদের শহিদ সঙ্গী শৈলেন্দ্র প্রতাপ সিংয়ের বোনের বিয়েতে উপস্থিত হয়ে সব দায়িত্ত্ব সামলেছেন। উত্তর ভারতের বিয়ের অনুষ্ঠানে কনের বাড়ির তরফ থেকে একটি রীতি মেনে চলা হয় যার নাম মণ্ডপ ধারণ। এই অনুষ্ঠানে কনের মাথার উপর একটি চুনরি বা ফুলের ওড়না ধরে কনে কে বিয়ের মন্ডপে নিয়ে আসা হয়। সাধারণত কনের মাথার উপর এই ফুলের ওড়না ধরেন তার ভাই।
মণ্ডপ ধারণের অনুষ্ঠানটি সম্পাদন করেছিলেন। কিছু সৈন্য ইউনিফর্মে ছিল, বাকিরা সাদা পোশাকে ছিল। রায়বেরেলিতে শৈলেন্দ্র সিংয়ের বাড়িতে পৌঁছনোর সঙ্গে সঙ্গেই বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত লোকজন আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। কনের রাউন্ডে যাওয়ার সময় মণ্ডপের চুনারি ধরে ফেলেন সিআরপিএফ জওয়ানরা। এ সময় অনেকের চোখ জলে ভরে যায়। তখনও বোনের বিয়ে হয়নি। দাদার কর্তব্য পালন করে যেতে পারেননি।
তাই যখন শৈলেন্দ্র এর সঙ্গী এক জওয়ান জানতে পারলেন যে শৈলেন্দ্রের ছোট বোনের বিয়ে হচ্ছে, তখন তিনি শৈলেন্দ্রের ব্যাটালিয়নের অন্যান্য জওয়ানদের জানান। সোমবার অনুষ্ঠিত বিয়েতে আচমকাই যখন দেড় ডজন সিআরপিএফ জওয়ান উপস্থিত হন, তখন উপস্থিত সকলে মানুষ অবাক হয়ে যায়। বিয়ের অনুষ্ঠানে ছেলের সঙ্গী জওয়ানদের দেখে শৈলেন্দ্রের পরিবারের সদস্যদের চোখ জলে ভরে যায়। মণ্ডপ ধরার সময় এলেই এগিয়ে আসেন সিআরপিএফ জওয়ানরা। চারদিক থেকে মণ্ডপের চুনারি শৈলেন্দ্রের বোনের মাথায় ধরেন তারা। শৈলেন্দ্রের বোন যখন কনের বেশে মণ্ডপের নিচে পৌঁছান, তখন পরিবেশ আরও আবেগঘন হয়ে ওঠে। সিআরপিএফ জওয়ানদের তোলা ফুলের ওড়না মাথার উপরে নিয়েই আগামী জীবনের দিকে এগিয়ে গেলেন শহীদ জওয়ান এর বোন।