দ্বিতীয় বার বিয়ে করার ইচ্ছা। কিন্তু সেই ইচ্ছায় বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল স্ত্রী এবং সন্তান। তাই শেষমেষ পথের কাঁটা সরাতে ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা করেন ওই ব্যক্তি। নির্মমভাবে হত্যা করেন তাদের। কিন্তু এই জঘন্য অপরাধের পরও কোনো শাস্তি হয়নি তার। কোনো না কোনোভাবে আইন কে ফাঁকি দিচ্ছিলেন। অবশেষে ৩৮ বছর পর উত্তরপ্রদেশের পিলিভীতে গণহত্যা মামলার রায় দিয়েছে আদালত।
এই মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে ৪ জনকে। ৩৮ বছর আগে ১৯৮৪ সালের ২৪শে আগস্ট মহলতায়, টিকামদাস চাঁদওয়ানি তার সহযোগীদের সাথে মিলে তার স্ত্রী, ছেলে এবং দুই মেয়েকে গলা কেটে হত্যা করেছিল। একই দিনে, টিকামদাস চাঁদওয়ানি কোতোয়ালিতে একটি এফআইআর দায়ের করেন, যাতে তিনি বলেন যে ডাকাত দল তার স্ত্রী গঙ্গা দেবী, ২২ বছরের ছেলে প্রভুদাস, ১৯ বছরের মেয়ে পুষ্প দেবী এবং ৭ বছরের মেয়ে রানুকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে। এবং সেই অজ্ঞাত ডাকাতরা লাখ লাখ টাকা ও সোনার গয়না নিয়ে পালিয়ে যায়। টিকমদাস জানান, ঘটনার সময় তিনি বারান্দায় ঘুমিয়ে ছিলেন, তাই তিনি কিছু জানতে পারেন নি।
তদন্ত চলাকালীন পুলিশের সন্দেহ গিয়ে পড়ে টিকমদাস এর উপর। তাকে কড়া জেরা করলে টিকমদাস তার অপরাধ স্বীকার করে। পুলিশি তদন্তে জানা গেছে, টিকমদাস ছিলেন একজন জঘন্য প্রকৃতির মানুষ। তার এক বন্ধু ডক্টর আসরার সাকিব পরামর্শ দেন যে যদি তার স্ত্রী-সন্তান না থাকে তাহলে তিনি টিকমদাসকে তিনি আবার বিয়ে করার বন্দোবস্ত করে দেবেন। টিকমদাসের স্ত্রী ও সন্তান থাকলেও তার তাদের প্রতি তাঁর বিশেষ কোনো টান ছিল না। তাকে দ্বিতীয় বিয়ের প্রলোভন দেওয়া হলে টিকমদাস আর কিছু চিন্তা না করেই নিজের স্ত্রী, ছেলে , মেয়েদের হত্যার পরিকল্পনা করে।
টিকমদাস বেরেলি থেকে পাঁচ সুপারি কিলার ডেকেছিল। এরপর পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৯৮৪ সালের ২৪ আগস্ট রাতে স্ত্রী ও সন্তানকে গলা কেটে হত্যা করে সেই পাঁচ সুপারি কিলার। এই মামলায়, পুলিশ ৩৮ বছর আগেই চার্জশিট দাখিল করেছিল। কিন্তু টিকমদাস চাঁদওয়ানি একটি হাইকোর্টে একটি রিট করেছিলেন, যার কারণে পিলিভীত আদালত থেকে মামলার সমস্ত ফাইল এলাহাবাদ হাইকোর্টে পাঠানো হয়েছিল এবং কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারেনি। অন্যদিকে, টিকমদাস আনন্দের সাথেই জীবনযাপন শুরু করে, তিনি আবার বিয়েও করেছিলেন এবং রমরমিয়ে ব্যবসাও করেছিলেন। সম্প্রতি আদালতের আবেদনের পর, তিন বছর আগে ফাইল ফিরে আসে এবং এই মামলার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পিলিভীতের অতিরিক্ত দায়রা বিচারক রাজীব সিং অভিযুক্ত হীরালাল টিকাম দাস, হীরালাল, সুরেশ এবং রমেশকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। যেখানে দুই অভিযুক্ত সুখপাল সিং ও ডাঃ ইসরার এর আগেই মারা গেছেন।