বলা হয় পৃথিবীতে সন্তানের লাশের চেয়ে ভারী কিছু নেই। আর সেই লাশ কাঁধে চাপিয়ে হাঁটতে দেখা গেল এক পিতাকে। কাঁধে পরে ৭ বছরের মেয়ের নিথর দেহ। নেই শববাহী কোনো গাড়ী। মেয়ের শব কাঁধে নিয়েই হেঁটে চলেছেন বাবা। মর্মান্তিক এই দৃশ্যের সাক্ষী থাকলো ছত্তিশগড়ের সুরগুজা জেলা। শববাহী গাড়ি পেতে দেরি হওয়ায় এক বাবা তার মেয়ের মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে দশ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে বাড়িতে পৌঁছেছেন বলে অভিযোগ। ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। সুরগুজার কর্মকর্তারা এই বিষয়ে জানিয়েছেন যে শুক্রবার সকালে জেলার লক্ষনপুর গ্রামের কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে সাত বছর বয়সী এক কিশোরীর মৃত্যু হয়। এরপর মেয়ের মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য শববাহী গাড়ি পৌঁছানোর আগেই বাবা মেয়ের লাশ কাঁধে নিয়ে বাড়ি চলে যান।
স্বাস্থ্য কেন্দ্রের গ্রামীণ চিকিৎসা সহকারী ডাঃ বিনোদ ভার্গব জানান, ঈশ্বর দাস যখন মেয়েটিকে নিয়ে হাসপাতালে আসেন, তখন তাঁর অক্সিজেনের মাত্রা ৬০-এর কাছাকাছি ছিল। ভার্গবের বক্তব্য অনুযায়ী, ঈশ্বর দাস বলেছিলেন যে মেয়েটির গত কয়েকদিন ধরে জ্বর ছিল এবং হাসপাতালে পৌঁছানোর সাথে সাথে ডাক্তাররা তার চিকিত্সাও শুরু করেছিলেন, কিন্তু তারা তাকে বাঁচাতে পারেননি। ভার্গব জানান, চিকিৎসা চলাকালে মেয়েটির অবস্থার অবনতি হলে শুক্রবার, ২৫ শে মার্চ সকাল সাড়ে ৭টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
মেয়ের পরিবারের সদস্যদের বলা হয়েছিল মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য শববাহী গাড়ি জন্য ডাকা হয়েছে, কিন্তু সকাল সাড়ে ৯টায় গাড়িটি হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই বাবা তার মেয়ের মৃতদেহ নিয়ে চলে গেছে বলে জানান তিনি। এদিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ছোট একটি মেয়ের মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে পায়ে হেঁটে যাচ্ছেন এক ব্যক্তি। জানা গেছে, ওই ব্যক্তি মেয়েটির লাশ বহন করে পায়ে হেঁটে ১০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেন।
শুক্রবার ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর, স্বাস্থ্যমন্ত্রী টিএস সিং দেও জেলার মুখ্য চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য আধিকারিককে (সিএমএইচও) বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। সিং দেব অম্বিকাপুরে বলেন, আমি ভিডিওটি দেখেছি। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। মেয়েটির লাশ কাঁধে নিয়ে যাচ্ছে এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে এবং সিএমএইচওকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সিংদেওর মতে, সিএমএইচওকে বলা হয়েছে যে সেখানে যে অফিসার পদে আছেন তিনি যদি তার দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম না হন তবে তাকে সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া উচিত। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছত্তিশগড়ের অম্বিকাপুর বিধানসভা কেন্দ্রের একজন বিধায়ক। তিনি বলেন, মরদেহ বহনকারী গাড়ি সেখানে পৌঁছেছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কিন্তু তার আগেই স্বজনরা লাশ নিয়ে হাসপাতাল থেকে চলে গেছে। সিং দেও বলেছেন যে কর্তব্যরত স্বাস্থ্য কর্মীদের গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে পরিবারকে রাজি করানো উচিত ছিল। এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে তা নিশ্চিত করা উচিত ছিল তাদের।