দেবতারা পুজো পান স্বাভাবিক এমনটা। কিন্তু নিত্য পূজা পাচ্ছেন রাক্ষসী? এমনটা শুনেছেন কখনো? অথচ এমনটাই হয়ে আসছে চন্দননগরের ‘রাক্ষুসে বাড়ি’-তে। হুগলি জেলার অন্তর্বর্তী এই শহরের নিচুপট্টি এলাকার অধিকারী বাড়িতে ঢুকলেই দেখা যাবে ভয়ালদর্শন রাক্ষসীর মূর্তি। তার চোখ দুটো ভাটার মতো জ্বলছে। বড় বড় দুটি দাঁত বেরিয়ে আছে ঠোটের দুপাশ দিয়ে। দেখলে দেবজনিত ভক্তির নয় বরং ভয়ের উদ্রেক হয় বেশি। ইনি পুতনা রাক্ষসীর বিগ্রহ। আর এই পুতনা রাক্ষসীর মূর্তিতেই নিয়ম মেনে পুজো দেওয়া হয় নিত্য। মন্দিরে অবশ্য শুধু রাক্ষসী নয় প্রতিষ্ঠিত রয়েছেন রাধাগোবিন্দ, জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রা। সকলেরই নিত্য পুজোর বন্দোবস্ত রয়েছে তিন বেলা। ভোগও দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে পুজো করা হয় পুতনা রাক্ষসীরও। এই বাড়িতে স্থাপিত পুতনা রাক্ষসীর মূর্তিটি কৃষ্ণকে বধ করতে আসা রাক্ষসী পুতনার কোলে শিশু কৃষ্ণ স্তনপান করছেন এমন মূর্তি। এই রূপেই রাক্ষসী পান পুজো।
কংস কৃষ্ণকে মারতে বৃন্দাবনে পাঠিয়ে ছিলেন পুতনা রাক্ষসীকে। কৃষ্ণকে বিষ স্তন পান করিয়ে মারার চেষ্টা করেছিল পুতনা। সেই পৌরাণিক আখ্যানের বিষয়কে মাথায় রেখেই এই পূতনা মূর্তি প্রতিষ্ঠিত হয়।
সেই মূর্তি প্রতিষ্ঠা হয় বর্তমান জেনারেশন এর চার পুরুষ আগে। চন্দননগর অধিকারী বাড়িতে হয় পুজো শুরু। গৌর অধিকারীর দাদু স্বপ্নে রাক্ষসের কাছ থেকে আদেশ পেয়ে প্রতিষ্ঠা করেন রাক্ষুসী মূর্তি। গৃহকর্ত্রী ছবি অধিকারী জানান, তার শ্বাশুড়ির কাছে শোনা, তাঁর শ্বশুড়কে রাক্ষুসী স্বপ্নে দেখা দিয়ে বলে তাকে মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করতে। রাধাগোবিন্দ মন্দিরে সেই আদেশ মেনে মূর্তি প্রতিষ্ঠার পর থেকে পুজো হয়ে আসছে। এমন ভিন্নধর্মী পুতনা রাক্ষসী কে পুজো দেওয়ার জন্য অধিকারী বাড়ি এখন রাক্ষুসে বাড়ি নামে পরিচিত হয়েছে। এখনও অনেক মানুষ এই রাক্ষসের মূর্তি দেখতে আসেন মন্দিরে।
আর এই বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণেই বাড়িটির খ্যাতি। তবে জগদ্ধাত্রী পুজো ও রথের সময় সবথেকে বেশি লোকের সমাগম হয় অধিকারী বাড়িতে। তবে কালের নিয়মে জীর্ণ এই বাড়ির প্রয়োজন সংস্কারের।