পাশের ঘর থেকে স্ত্রীর কানে আসছিল দুই ছেলের সাথে বৃদ্ধ স্বামীর ঝগড়ার আওয়াজ। রোজ রোজ এমন ঝামেলা নিত্যৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল তাই নিজেকে জড়াতে চাননি তিতিবিরক্ত মহিলা। বুধবার সন্ধ্যাতেও রোজকার মত অশান্তি চলছিল। পাশের ঘরেই ওই মহিলা ছিলেন। চেঁচামেচি চলছিলই। কিন্তু তিনি এমন কিছু পাত্তা দেননি। হঠাৎ করেই তার স্বামীর আর্তনাদ শুনতে পান তিনি। সাথে সাথেই চামড়া পোড়ার গন্ধ। অতিসত্তর ঘরে ঢুকে দেখেন স্বামীর গায়ে আগুন জ্বলছে। এমনটাই তার মত। এক ব্যক্তিকে আগুনে পুড়িয়ে মারার চেষ্টার অভিযোগ উঠল দুই ছেলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুরে। দুজনেই ঘটনার পর থেকে পলাতক। গৌরাঙ্গ মজুমদার নামে ওই ব্যক্তিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে বাস করেন গৌরাঙ্গ। গৌরাঙ্গ দিনমজুরির কাজ করে সংসার চালান। আর কোনও কাজ সেভাবে ছেলেরা করতেন না। সংসারে অশান্তি লেগেই থাকত তা নিয়ে। অথচ টাকা চেয়ে চাপ দিতেন দুই ছেলে নেশা করার জন্য। সে কথা মাঝেমধ্যে প্রতিবেশীদের কাছে জানাতেনও গৌরাঙ্গ। প্রতিবেশীরাও অশান্তির কথা জানতেন। মধ্যস্থতা করতেন মাঝেমধ্যে। আর একান্তই মাঝেমধ্যে পারিবারিক বিবাদ ভেবে এড়িয়ে যেতেন।
অশান্তির আওয়াজ বুধবার সন্ধ্যাতেও শুনতে পেয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। একপ্রকার বিরক্ত ছিলেন গৌরাঙ্গের স্ত্রীও পারিবারিক অশান্তিতে। তিনি পাশের ঘরেই ছিলেন সে সময়। তিনি বিশেষ গুরুত্ব দেননি রোজকার বাবা-ছেলের অশান্তি ভেবে। অভিযোগ, গৌরাঙ্গের তীব্র আর্তনাদ আচমকাই শুনতে পান তিনি। দৌড়ে গিয়ে ঘরে দেখেন, উদভ্রান্তের মতো এদিক-ওদিক ছুটছেন তিনি আগুন গায়ে। ততক্ষণে স্থানীয় বাসিন্দারাও চিৎকারে চলে আসেন। প্রথমে আগুন নেভানো হয় একটি কম্বল চাপা দিয়ে।
প্রথমে সামালি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গৌরঙ্গকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁর শারীরিক অবস্থার সেখানে অবনতি হওয়ায় চিকিংসকরা কলকাতায় স্থান্তরিত করেছেন। বিষ্ণুপুর থানার পুলিশ পুরো বিষয়টি তদন্ত করছে। পলাতক দুই ছেলে ঘটনার পর থেকে।
গৌরাঙ্গের স্ত্রীর অভিযোগ, এই কাজ করেছে তাঁর ছেলেরাই। কিন্তু কেন, তিনি তা বলতে পারছেন না। কী কারণে এই আক্রোশ বাবার ওপর জন্মাতে পারে ছেলেদের মনে, তা বুঝতেই পারছেন না তিনি। তিনি এমনকি কথা বলার মতো পরিস্থিতিতেও নেই। এক প্রতিবেশী বলেন, “ অশান্তি হত বিভিন্ন কারণে। খুব নেশাও করত ছেলেগুলো। তবে আজ কী ঘটেছে, সেটা বলতে পারব না। আমরা চিৎকার কান্না শুনে ছুটে এসে দেখি গৌরাঙ্গদা আগুনে জ্বলছেন।” তল্লাশি চলছে পলাতক দুই ছেলের খোঁজে। তদন্তে পুলিশ।