বাবা-মায়ের মানবিক আবেদনে সাড়া দিয়ে অনন্য নজির গড়ল রানাঘাট পৌরসভা। এক সদ্যোজাত সন্তানের ধর্মবিশ্বাস এর জায়গায় লেখা হলো ‘মানবতা’। হিন্দু, মুসলমান বা খ্রিস্টান নয়, মানবতাই সবচেয়ে বড় ধর্ম। এমন বিশ্বাস থেকেই এক দম্পতি নিজেদের একমাত্র সন্তানের বার্থ সার্টিফিকেট হাতে পাওয়ার জন্য নদিয়ার রানাঘাট পৌরসভায় কাছে সন্তানের ধর্ম হিসাবে ‘হিউম্যানিজম’ বা ‘মানবধর্ম’- এমনটাই উল্লেখ করে আবেদন জানিয়েছিল। এমন জন্মের শংশাপত্রের (Birth Certificate) পেয়ে কিছুটা ভাবনায় পড়ে গিয়েছিল রানাঘাট পৌরকর্তৃপক্ষ। কারণ, ধর্মবিশ্বাস এর জায়গায় হিন্দু বা মুসলিম নয়, মানবধর্ম লেখার অনুরোধ জানিয়ে জন্ম শংসাপত্রের জন্য এই জাতীয় আবেদনপত্র রানাঘাট পৌরসভার কাছে জমা পড়েনি। স্বভাবতই প্রাথমিক কিছুটা দ্বিধায় ছিল। এমন জন্মের শংসাপত্র আদৌ দেওয়া সম্ভব কিনা এই নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে পৌর কর্তারা। তবে এই মানব ধর্মের আবেদনের বিষয়টি রানাঘাট মহকুমা প্রশাসনের কাছে পর্যন্ত পৌঁছয়। তবে অবশেষে ওই দম্পতির আবেদনকেই স্বীকৃতি দিয়ে রানাঘাট মহকুমা প্রশাসন ওই সন্তানের ধর্ম হিসাবে ‘মানবধর্ম’কেই স্বীকৃতি দিল।
মানবধর্ম’ স্বীকৃতি সহ জন্মের শংসাপত্র প্রাপ্ত শিশুর নাম সৃজিত মুখোপাধ্যায়। তার বাবার নাম স্বরূপ মুখোপাধ্যায় এবং মায়ের নাম মৌমিতা মুখোপাধ্যায়। তারা বসবাস করেন রানাঘাট-২ নম্বর ব্লকের আইশমালির পুরাতন পাড়ায়। স্বরূপ মুখোপাধ্যায় বহু আগে থেকেই বামপন্থী মানসিকতার সাথে পরিচিত। বহু আন্দোলনের সহকর্মী স্বরুপ মুখোপাধ্যায় নিজেকে সমাজকর্মী বলেও পরিচয় দিয়ে থাকেন। বর্তমানে সিপিএম দলের ছাত্র যুব সংগঠন DYFI রাজ্য কমিটির সদস্যও তিনি। আগাগোড়াই একটু আলাদা চিন্তা ভাবনা নিয়ে চলেন তিনি। গতে বাঁধা সামাজিক নিয়মের বাইরে বেরিয়ে ভাবনা রাখেন। স্বরূপ বাবুর জন্ম যদিও হিন্দু ব্রাহ্মণ পরিবারে তাও সমাজে প্রচলিত হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ , জৈনর মতো প্রচলিত ধর্ম বিশ্বাসের ধ্যান ধারণায় নিজেকে আবদ্ধ রাখেন না তিনি। স্বরূপবাবু মনে করেন, মানুষের বিপদে আপদে পাশে দাঁড়ানোর ধর্মই মানব ধর্মই সর্বোশ্রেষ্ঠ।
কিছুটা এই মতাদর্শের মানসিকতার মানুষ চাকদহের ক্ষুদিরামপল্লির বাসিন্দা মৌমিতার। সেই সূত্রেই স্বরূপ বাবু ও মৌমিতা দেবীর সম্পর্ক পরিণতি পায়। গত বছর ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে স্বরূপ বাবু ও মৌমিতার বিয়ের রেজিস্ট্রেশন হয়। এক বছর ২০২১ সালের ৫ই এপ্রিল পর রানাঘাটের এক বেসরকারি নার্সিংহোমে মৌমিতা মুখোপাধ্যায় এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেয়। তারা নিজেদের সন্তানের নাম রাখেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়। এরপর তাদের প্রথম সন্তানের জন্ম শংসাপত্র পাওয়ার জন্য তাঁরা রানাঘাট পুরসভার কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন। সেই আবেদনপত্রে যেখানে ধর্মের উল্লেখ করতে হয় সেই জায়গায় তাঁরা ‘হিউম্যানিজম’ (Humanism) অর্থাৎ ‘মানবধর্ম’ এর উল্লেখ করেন।
আমরা দু’জন সব সময় এটাই চেয়ে এসেছি, ধর্মের গণ্ডি পেরিয়ে মানুষের পাশে থাকার ধর্মকে নিয়েই বড় হয়ে উঠুক আমাদের সন্তান। শেষপর্যন্ত আমাদের সেই মানব ধর্মের আবেদনকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ” ছেলের মানব ধর্মের জন্ম শংসাপত্র হাতে পাওয়ার পর খুশি হয়ে জানান ওই দম্পতি।