সময়ের ব্যবধান মাত্র ৮ ঘন্টার। আর এই ৮ ঘন্টায় বিজ্ঞানের বদন্যত্যায় হল অসাধ্য সাধন। মহিলা থেকে পুরুষে রূপান্তরিত হয়ে গেলেন এই নারী। বিহারের সারান জেলার মারহাউরা মহকুমার বহুয়ারা পট্টি গ্রামের ঠাকুরবাড়ি টোলার বাসিন্দা মেয়ে গুড়িয়া কুমারী। মেয়ে হয়ে জন্মের পর থেকে যখন থেকে তাঁর জ্ঞান ফিরেছে, তখন থেকেই তিনি নিজের মধ্যে যেন অনুভব করতেন পুরুষালি আচরণের প্রভাব। মেয়েদের চেয়ে ছেলেদের সঙ্গেই বেশি বন্ধুত্ব হত তার। আসলে মেয়েদের সাথে বন্ধুত্ব করার পরিবর্তে তিনি ছেলেদের সাথে বন্ধুত্ব করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন। গুড়িয়া ছেলেদের মত জামাকাপড়, প্যান্ট শার্ট পরতে বেশী পছন্দ করতেন। ছেলেদের সাথে সাইকেল চালাতেন। পরে অনুভব করেন তার মধ্যে নারী সত্তার অভাব আছে।
সেই কারনেই তিনি অস্ত্রোপচার করে ছেলে হয়েছেন। দিল্লিতে ২০২১ এর, ২৭ শে ডিসেম্বর তারিখে লিঙ্গ পরিবর্তনের জন্য অস্ত্রোপচার করেছিলেন। এই অস্ত্রোপচার (লিঙ্গ পরিবর্তনের জন্য সার্জারি) মোট ৮ ঘন্টা সময় নেয়। গুড়িয়ার বর্তমান নাম রুদ্রাক্ষ। তিনি জানান যে তাকে প্রতি মাসে হরমোন ইনজেকশন নিয়ে হবে, যা প্রায় ২ বছর ধরে করতে হবে, তারপরে তিনি সম্পূর্ণ পুরুষ হয়ে যাবেন।
গুড়িয়া থেকে রুদ্রাক্ষের যাত্রা সহজ ছিল না। গুড়িয়াকে তার পরিবারের সদস্যদের সম্মতি পেতে তার ইচ্ছা পূরণ করতে অনেক লড়াই করতে হয়েছিল। তিনি বলেন, প্রথমে বাবা-মা রাজি না হলেও পরে মেয়ের ইচ্ছায় রাজি হয়ে পূর্ণ সহযোগিতা দেন। তিনি তার শৈশব শিক্ষা করেছিলেন আপগ্রেডেড মিডল স্কুল, সিসওয়ানে। তিনি ন্যাশনাল হাই স্কুল রামপুর থেকে অষ্টম শ্রেণী থেকে ম্যাট্রিক পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন এবং সঞ্জয় গান্ধী ইন্টার কলেজ, নাগড়া থেকে ইন্টারমিডিয়েট করেন। জেপিএম থেকে স্নাতক হওয়ার পর, তিনি বর্তমানে হরিয়ানা থেকে বি ফার্মা অধ্যয়ন করছেন।
গুড়িয়া জানিয়েছেন, তাঁর বাবা তাঁর জমানো টাকা থেকে এই ব্যয়বহুল অস্ত্রোপচারের সমস্ত খরচ বহন করেছেন। ডাক্তাররা জানিয়েছেন মহিলা থেকে পুরুষ হয়ে সে সাধারন ভাবেই নিজের জীবন কাটাতে পারে। হয়তো বিয়ের পর রুদ্রাক্ষর (আগে নাম ছিল গুড়িয়া) সন্তান উৎপাদনে অসুবিধা হতে পারে। তিনি যদি একজন সাধারণ মেয়েকে বিয়ে করেন তবে ডাক্তারের পরামর্শে তার সন্তান হতে পারে। অন্যদিকে, তিনি যদি একজন ট্রান্স মহিলাকে বিয়ে করে তবে তাদের কোন সন্তান হতে পারে না। কিন্তু এসব নিয়ে গুড়িয়া বেশী ভাবতে রাজি নন। বর্তমানে, গুদিয়া তার ভবিষ্যত জীবন সম্পর্কে খুব আশাবাদী এবং ইতিবাচক।