বিয়ের সময় আরো নানা দাবি-দাওয়ার সাথে ছেলের বাবার দাবি ছিল ফ্রিজ লাগবে। কিন্তু বাকি আসবাবপত্র গয়নাগাটি সব কিছুর পিছনে খরচা করে ফ্রিজটা আর কুলিয়ে উঠতে পারেনি মেয়ের বাবা। অবশ্য কথা দিয়েছিলে দিয়ে দেবেন পরে। তখনকার মতন বিয়ে হয়ে যায়। কিন্তু কয়েক মাস যেতে না যেতেই সেই ফ্রিজের দাবি নিয়ে গৃহবধূর ওপর অত্যাচার শুরু করে শশুর শাশুড়ি। গরমে ফ্রিজের জল খেতে পারছে না। বাবাকে বলতে বলেছিল এক্ষুনি ফ্রিজটা কিনে দিতে। এই নিয়ে প্রায় রোজই চলত অশান্তি। এরপরই একদিন মর্মান্তিক ঘটনা। শ্বশুরবাড়ি থেকে উদ্ধার হয় গৃহবধূর অগ্নিদগ্ধ প্রাণহীন দেহ। শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা আত্মহত্যা বলে দাবি করলেও মেয়েটির পরিবারের দাবি ফ্রিজ না দিতে পারায় আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়েছে তাঁকে।
মৃত গৃহবধূর নাম আলপনা মণ্ডল (২৪)। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি বসিরহাটের হাড়োয়া থানার সোনাপুকুর-শঙ্করপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কুচিয়ামোড়া গ্রামের। উত্তর ২৪ পরগণার দত্তপুকুর থানার জয়পুল এলাকার বাসিন্দা আলপনার সাথে তিন বছর আগে সম্বন্ধ করে বিয়ে দেওয়া হয় হাড়োয়ার বাসিন্দা বিশ্বজিৎ মণ্ডলের। বিয়েতে তাদের যৌতুকের প্রায় সব দাবি দাওয়া পূরণ হলেও ফ্রিজটা দেওয়া হয়নি।
শ্বশুরবাড়ি অত্যাচারের কথা প্রাথমিকভাবে বাড়িতে কিছু জানায়নি আলপনা। তবে পাড়া-প্রতিবেশীরা বলেছেন বাড়ি থেকে প্রায়ই চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ ভেসে আসতো। আলপনা দেবীর স্বামী কাজে কলকাতায় থাকতো।
স্থানীয় সূত্রে খবর, বুধবার সকালবেলাও আলপনার চিৎকার কানে এসেছিল। এরপরই ভেসে আসে তাঁর আর্তচিৎকার। কিছুক্ষণের মধ্যেই আর কোন সাড়াশব্দ পাওয়া যায় না। এর পরেই তাদের চোখে আসে আলপনার অগ্নিদগ্ধ শরীর। তারা হাড়োয়া থানায় খবর দেয়। পুলিশ খবর পেয়ে পৌঁছে অগ্নিদগ্ধ দেহটি উদ্ধার করে হাড়োয়া গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যায় ময়নাতদন্তের জন্য। পলাতক তার শ্বশুর ও শাশুড়ি।
অভিযোগ, শ্বশুর শাশুড়ির অত্যাচার করে মেরে ফেলে পরে প্রমাণ লোপাট করতে আগুন ধরিয়েছে তার শরীরে। শ্বশুর রবীন মন্ডল ও শাশুড়ি গীতারানি মন্ডলের বিরুদ্ধে হাড়োয়া থানায় তার মেয়েকে হত্যা ও প্রমাণ লোপাটের চেষ্টার লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন মৃতার বাবা অনিন্দ্র সরকার। তিনি জানান বিয়ে দেবার পর তার হাত এখন ফাঁকা, কথা দিয়েছিলেন একটু সামলে নিয়েই ফ্রিজ কিনে দেবেন। কিন্তু ওরা মেরেই ফেলল মেয়েটাকে।