নিজের ভালোবাসার মানুষকে বিয়ে করার জেদ ছিল। সব বাঁধা বেরিয়ে সম্ভব করেছিলেন বিয়ের স্বপ্ন। কিন্তু ভাগ্যের এমন ফের যে নব দম্পতির সংসার শুরু করা হলো না। হাসপাতালেই ১২ দিনের সংসার ছিল তাঁর। হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আর স্বামী হাসানের বাড়ি পর্যন্ত বউ হিসাবে যাওয়া হল না ফাহমিদা কামালের। বিয়ের ১২ দিনের মাথায় সংসারের সব মায়া কাটিয়ে তিনি যাত্রা করলেন অন্যভুবনে। তার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন তিনি।
কান্সার আক্রান্ত ফাহমিদাকে বিয়ে করেছিল তার দীর্ঘদিনের প্রেমিক। হাসপাতালের কেবিনেই আয়োজন হয়েছিল বিয়ে। নাকে অক্সিজেনের নল লাগানো অবস্থাতেই লাল রঙের বেনারসিতে সেজেছিলেন ২৬ বছর বয়সী ক্যান্সার আক্রান্ত ফাহমিদা কামাল। কিন্তু বিয়ে করলেও সংসার আর করা হল না তাঁর।
একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ পাঠরতা ফাহমিদার স্বপ্ন ছিল প্রেমিক মাহমুদুল হাসানের সঙ্গে বিয়ে করে বাকি জীবন টা কাটানোর। তাদের সম্পর্কের বিষয়টি পরিবারে জানালে সম্মতিও মেলে দুই পরিবারের তরফ থেকেও। বিয়ের কথাবার্তাও শুরু হয় দুই পরিবারের মধ্যে ২০২০ সালের শেষ দিকে।
কিন্তু, হঠাৎ করেই শারীরিক অসুস্থতা অনুভব করতে থাকেন ফাহমিদা। নানা শারীরিক সমস্যা হতে থাকে তাঁর। চিকিৎসা করাতে গেলে গিয়ে জানতে পারেন, তিনি আক্রান্ত হয়েছেন মারণ রোগ ক্যান্সারে। ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা শুরু হয় ফাহমিদার। এরপরে চিকিৎসার জন্য নিয়ে ভারতের মুম্বাইয়ের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালেও আনা হয়।
ক্যানসারে আক্রান্ত ফাহমিদার শারীরিক অবস্থার দিন দিন অবনতি হতে থাকে। বুঝতে পারছিলেন আস্তে আস্তে দিন ফুরিয়ে আসছে তাঁর। কিন্তু, তাও লড়াই ছাড়েননি। দাঁতে দাঁত চেপে কান্সারের বিরুদ্ধে জারি রেখেছিলেন লড়াই। এই লড়াইয়ে পাশে পেয়েছিলেন প্রেমিক মাহমুদুল হাসান কে। যুদ্ধ জয় করে এক সাথে জীবন শুরু করার স্বপ্ন দেখেছিলেন দুজনে। কিন্তু প্রেমিকার অবস্থা ক্রমেই খারাপের দিকে এগোচ্ছিল।
তাই নগরের মেডিক্যাল সেন্টারে মৃত্যুপথ যাত্রী প্রেমিকাকে লাল বেনারসি পরিয়ে, কনের সাজে সাজিয়ে ১ টাকা কাবিনে বিয়ে করেন মাহমুদুল হাসান। যুবক মাহমুদুল জানান, ‘আমি ফাহমিদাকে ভীষণ ভালোবাসি। কিন্তু অনেকদিন ধরে ফাহমিদা ক্যানসার আক্রান্ত। সবকিছু জেনেই আমি তাকে বিয়ে করেছি। এমনকি বিয়ের পর স্ত্রীর সমস্ত রকম চিকিৎসার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছি। আমাদের জন্য প্রার্থনা করবেন।’
কিন্তু তাদের লড়াই থেমে যায়। সোমবার (২১ মার্চ) সকাল ৭টার দিকে বেসরকারি হাসপাতাল মেডিক্যাল সেন্টারে চিকিৎসারত ফাহমিদা এই পৃথিবী ছেড়ে যাত্রা করেন অনন্তের পথে। মৃত্যু হয় তার। মেডিক্যাল সেন্টারের জেনারেল ম্যনেজার শাহ আলম ভূইঁয়া এই বিষয়ে জানান, সকালবেলা ৭টার সময় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা গেছেন। মরদেহ স্বজনদের হাতে হস্তান্তর করানো হয়েছে।