অদ্ভুত নাম অথবা অদ্ভুত ধরনের পদবীর কারণে অনেক ক্ষেত্রেই স্কুল অথবা কলেজে বহুবার হাসি মশকরা ইত্যাদির সম্মুখীন হতে হয় অনেককে। এমন অভিজ্ঞতা আমাদের মধ্যে বহু মানুষেরই হয়েছে। কিন্তু নাম বা পদবীর কারণে বাতিল হয়ে যাচ্ছে চাকরীর আবেদন, এমন সচারাচর শোনা যায় না। তেমনই এক ঘটনা ঘটছে আসামের এক তরুণীর সাথে।
তরুণীর শিক্ষাগত যোগ্যতা যথেষ্ট বেশী। রীতিমত এগ্রিকালচারাল একোনমিক্স অ্যান্ড ফার্ম ম্যানেজমেন্ট নিয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রীধারি সে। অর্থাৎ চাকরির জন্য তিনি “যথেষ্ট যোগ্য” সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিছুদিন আগে তিনি কেন্দ্রীয় কোম্পানি ‘ন্যাশনাল সিড কর্পোরেশন লিমিটেডে’ এ চাকরির আবেদন করার প্রয়োজনে অনলাইন ফর্ম ফিলাপ করতে যান কিন্তু কিছুতেই তার ফর্ম জমা পড়ছে না। কারন, তার পদবী। তরুণীর বক্তব্য অনুযায়ী, যখনই তিনি কম্পিউটারে চাকরির জন্যে ফর্ম ফিলাপ করছেন, তখনই তার পদবীটিকে অনলাইন ল্যাঙ্গুয়েজ ডিটেক্টিং সফটওয়্যার অশ্লীল শব্দ হিসেবে চিহ্নিত করে চাকরীর আবেদন বাতিল করে দিচ্ছে। ফলে আবেদন করেও নাম এন্ট্রি না করতে পারার জন্য আবেদন সম্পূর্ন হচ্ছে না তা ক্যান্সেল হয়ে যাচ্ছে।
এত অবধি পরে নিশ্চয় আপনার জানতে ইচ্ছা করছে বা কৌতুহল হচ্ছে যে তরুণীর এমন কি নামের পদবী যাকে ঘিরে এমন অবস্থা। জানা গেছে ওই তরুণীর নাম প্রিয়াঙ্কা চু’ তিয়া। অসমের গোগামুখ এর বাসিন্দা ওই তরুণী। নাম প্রিয়াঙ্কা। মেয়েটি আসলে আদিবাসী সম্প্রদায়ের। তিনি যে আদিবাসী সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত সেখানে এই রকমের দু’ধরনের পদবীর ভীষণভাবে চল রয়েছে। তারই একটি ‘ চু _ তিয়া”। অসমীয়া ভাষায় উচ্চারণ করলে দাড়ায় অনেকটা “সুটিয়া”। কিন্তু ইংরেজিতে বানান (Chutia) লিখলে যা দাড়ায় তার অর্থ সেই অশ্লীল ভাষাই দাড়ায়।
ইংরেজিতে তিনি যতবারই তিনি নিজের টাইটেল লিখতে যাচ্ছেন ওই অনলাইন আবেদন পত্রে ততবারই ওই ওয়েবসাইটের নির্দিষ্ট সফটওয়্যার তাকে বলছে সঠিক ” নাউন” যেন তিনি ব্যবহার করেন। ফলে অনলাইনে প্রিয়াঙ্কা আর ফর্ম পূরণ করতে পারেননি। পরে তিনি একটি ইমেইলের মাধ্যমে সম্পূর্ণ বিষয়টা সংস্থাকে জানান এবং তারপর প্রিয়াঙ্কার আবেদন গ্রহন করে সেই সংস্থা।
তবে এই প্রথম নয় এর আগেও অনেক বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরীর খোঁজ করতে গিয়ে তাঁর পদবীর জন্য আবেদনপত্র বাতিল হয়ে গিয়েছে। এমনকি প্রিয়াঙ্কা এও জানান, যখনই কোন কোম্পানিতে তিনি চাকরির ইন্টারভিউ দিতে গেছেন, তখনই সকলের কাছেই উপহাস বা মশকরার শিকার হতে হয়েছে তাকে। লোকজনকে তিনি বোঝাতে বোঝাতে ক্লান্ত হয়ে গেছেন যে তার টাইটেল কোন অশ্লীল গালাগালি নয়। নিছকই একটি পদবীমাত্র। আসামের আদিবাসী সম্প্রদায়ের বহু মানুষই এই পদবী নিজের নামের শেষে ব্যবহার করেন।
শেষমেষ ওই কেন্দ্রীয় সংস্থায় তাকে ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকা হয়েছে। কিন্তু এখনও চাকরি পাবেন কিনা তা নিয়ে দ্বিধায় আছেন প্রিয়াঙ্কা।