আধুনিক যুগ। স্মার্টফোনে হোয়াটসঅ্যাপ-ফেসবুকে-ইনস্টাগ্রাম সোশ্যাল মিডিয়ায় যুগে প্রাচীন সব ধ্যান ধারনা আজকালকার যুগের মানুষের কাছে রীতিমত বস্তাপচা। কিন্তু সত্যিই কি তাই। সত্যিই কি যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মুক্ত মনা হতে পেরেছে ভারতীয় সমাজ? আদ্যিকালের সমস্ত কুসংস্কার আর অবৈজ্ঞানিক ধ্যানধারণা থেকে কতটা মুক্ত হতে পেরেছি আমরা? এই ধরনের যুক্তি-তর্ক আবারও উস্কে দিয়েছে বেশ কিছুদিনের আগের অনলাইন পণ্য বিপণী সংস্থা আমাজনে বিক্রী হওয়া একটি ‘প্রোডাক্ট’। সমাজের সব স্তরে রীতিমত ছি ছি পরে যায়। চলা বলায় আধুনিক হলেও আমরা যে কতটা পিছিয়ে তা যেন চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল আমজনে
বেশ কিছুদিন আগে আমাজনে একটি পিল বিক্রি হতে শুরু হয়। যেই পিলের নাম আই ভার্জিন (‘I-Virgin’)। যার দাম নির্ধারিত করা হয়েছিল ৩৬০০ টাকা। ৫০০ টাকা ছাড়ের অফার দিয়ে ওই পিল কিনতে গেলে দাম পড়ত প্রায় ৩১০০ টাকা। কিন্তু ওই পিলের কার্যকরিতা জেনে অবাক হয়ে গেছেন সকলে। আধুনিক যুগে সতীত্বের পরীক্ষা দিতে রক্তপাত করাবে ওই পিল।
বিংশ শতাব্দীতে -এ পৌঁছে কুমারীত্বের প্রমাণ দিতে তাই এরম প্যাকেটজাত পিলের বিপননী অবাক করেছে গোটা শিক্ষিত সমাজকে। এই ‘আই ভার্জিন পিল’ মিলছিল একটি মাত্র ক্লিকেই অ্যামাজনের পণ্য বিপণন সাইটে। সঙ্গে রয়েছে অনেকগুলি পিল সম্পর্কীয় ভালো কথা। লেখা ছিল এই আই ভার্জিন পিলের নেই কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। প্রয়োজন পড়ে না কোনও অপারেশন এর। অজ্ঞানও করতে হবে। স্রেফ পিলটি গিলে খেলেই শরীরে জমে যাবে সতীত্বের প্রমাণ দেওয়ায় প্রয়োজনীয় থকথকে ‘নকল’ রক্ত। প্রথম বার সঙ্গমের পরেই যা সতীচ্ছদ ভেদ করে বেরিয়ে আসবে আর প্রমাণ দেবে কুমারীত্বের। আর অ্যামাজনের এই জাতীয় পণ্য বিক্রির খবর জানতে পেরেই প্রতিবাদে সরব হয়েছেন নানা ক্ষেত্রের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। বিরোধিতায় করেছেন আমজনতাও। যদিও জানা গেছে প্রবল বিরোধের মুখে পণ্যটিকে নিজেদের ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে দিয়েছে অ্যামাজন।
প্রথমবার শারীরিক সঙ্গমের সময় মেয়েটিকে রক্তাক্ত হতেই হবে— এই ধরনের কুসংস্কার আজও বর্তমান তৃতীয় বিশ্বের নানা দেশে। কিন্তু অবাক করা বিষয় এই যে অনেক উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের শিক্ষিত সমাজও এই ‘ট্যাবু’ বিশ্বাস করে এখনও এবং বহন করে এসেছে যুগের পর যুগ। ভারতও তার ব্যাতিক্রম নয়। গ্রাম ইত্যাদি জায়গার প্রত্যন্ত নানা অঞ্চলে তো বটেই, এমনকি, শহুরে শিক্ষিত সমাজেও এই জাতীয় সংস্কার অনেকের মনে চেপে বসে আছে। যেখানে বিজ্ঞান জানাচ্ছে কুমারীত্বের এই পর্দা, হাইমেন ছিঁড়ে যেতে পারে নানা কারণেই এমনকি সাইকেল চালালেও বা পিছলে পরে গেলেও কিন্তু রক্ত দিয়ে সতীত্বের প্রমাণ দেওয়ার খেলা যে অতীতে হারিয়ে যায়নি, তা-ই কি প্রমাণ করছে অ্যামাজনের মত অনলাইন বিপণন সাইটে এমন পণ্যের কেনাবেচা? আঁতকে উঠেছে অনেকেই।