কাবুল এয়ারপোর্ট থেকে বিমানে চড়ে যেকোনো মূল্যে দেশ ছেড়ে পালাতে চাইছেন মানুষজন। তালিবানদের আতঙ্কে আমেরিকার উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়া বিমানে ওঠার জন্যে রীতিমত হুড়োহুড়ি পরে যায়। যেই বিমানে ঠাঁই হয় ১৫০ জনের সেই বিমানে চরে বসেছিলেন ৬৪০ জন। যারা সেই বিমানের অভ্যন্তরে ঠাঁই পাননি তারা কোনো ভাবে বিমানের গায়ে লেপ্টে থাকতে চান। বিমানের চাকা ধরে ঝুলতে থাকেন দুই আফগান ব্যক্তি। কিন্তু, তাতে হয়না শেষরক্ষা। বিমান মাঝ আকাশে পৌঁছতেই পর পর খসে পড়ে যান দু’জন। গত সোমবার এমন হাড়হিম করা দৃশ্যটি দেখে আতঙ্কে গোটা বিশ্ব শিউরে উঠেছিল।
স্থানীয় এক ব্যক্তির ক্যামেরায় ধরা পড়া এই হৃদয়বিদারক দৃশ্যে। আর তার থেকেও মর্মান্তিক ঘটনা হল বিমান থেকে খসে পড়া দুইজনের মধ্যে একজন আফগানিস্তান জাতীয় দলের ফুটবলার। নাম জাকির আনওয়ারি (Jaki Anwari)। আফগান সরকারি সংবাদ সংস্থাই জাকির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন।
সেদিন আফগানিস্তানে কিছুটা আতঙ্কে আর কিছুটা গুজবে আফগানিস্তানের হামিদ কারজ়াই আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে ভীড় জমিয়েছিলেন হাজার হাজার মানুষ। গুজব ছড়িয়েছিল আফগানিস্তান থেকে ২০ হাজার মানুষকে কানাডায় পাঠানো হবে। সেখানেই আশ্রয় দেওয়া হবে তাদের। এই গুজব কানে পৌঁছেছিল জাকির আনওয়ারির। আর সম্ভবত ওইকারণেই কাবুল এয়ারপোর্টে বাকি হাজার হাজার মানুষের সাথে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু অনেকের মতই তিনিও বিমানে উঠতে পারেননি। কিন্তু দেশ ছাড়ার জন্য সে রীতিমত পাগল হয়ে ওঠে বাকি অনেকের মতন। বাকি বেশ কিছু আফগানীর মতন উঠে পড়েন মার্কিন বিমানের চাকার উপর। আশা ছিল কোনও রকমে আফগানিস্তান দেশ থেকে বেরোতে পারলেই তালিবানিদের খপ্পরে আর পড়তে হবে না, প্রাণটা বাঁচানো যাবে। মাঝ আকাশে বিমান পৌঁছতে মার্কিন সেনার সি-১৭ যুদ্ধবিমান থেকে খসে পড়েছিলেন মোট তিনজন। তাঁদের মধ্যেই একজন জাকির আনওয়ারি। স্বপ্ন ছিল ফুটবলার হিসাবে আকাশ ছোঁয়ার কিন্তু আকাশ থেকে পড়ে মর্মান্তিক মৃত্যু হল তার। আর বাকি দুই খসে পরা ব্যাক্তি দুইজন কিশোর। তারা দুই ভাই। দুই ভাইয়ের মধ্যে একজনের শরীর কাবুল বিমানবন্দর থেকে কিছু দূরে একজনের বাড়ির ছাদে মেলে ছিন্নভিন্ন অবস্থায়। এখনও খোঁজ পাওয়া যায়নি অপরজনের দেহাবশেষের সন্ধান। আপাতত তাকে খুঁজে চলেছে পরিবার।