গুজরাট রাজ্যে অবস্থিত ‘সাসান গির’ অরণ্য। এই অরণ্য সারা ভারতে পরিচিত ‘গির অরণ্য’ নামে। দীর্ঘ ১৪২২ বর্গকিলোমিটার অঞ্চল জুড়ে অবস্থিত গির অরণ্য। নানা বন্যপ্রাণীর বাস এই অরণ্যে। বিশেষত গির অরণ্যের সিংহ তো জগৎ বিখ্যাত। এছাড়াও চিতাবাঘ, বন বিড়াল, সোনালি রঙের শিয়াল, হায়না, বেজি, নীলগাই, অ্যান্টিলোপ, বুনোশুয়োর, সজারু, খরগোশ, প্যাঙ্গোলিন ও আরও কত কি জীবজন্তু এবং প্রায় প্রজাতির পাখি। আর এই গির অরণ্যের থেকে সামান্য দূরেই আছে’ জাম্বুর’ গ্রাম।
গ্রামের পথঘাট ও বাড়িঘরগুলি দেখলে আর পাঁচটি অন্যান্য ভারতীয় গ্রামের মতনই বলে মনে হবে। কিন্তু গ্রামে ঢোকার পরই এই ধারণা বদলাতে শুরু করবে। গ্রামের মানুষদের দেখে একটু অবাকই লাগবে। কেননা সাধারণ ভারতীয়দের চেহারার সঙ্গে এই গ্রামবাসীদের চেহারার কোনো সাদৃশ্য নেই। কালো রঙের ত্বক, বাদামি রঙের কোঁকড়া চুল, চওড়া চ্যাপ্টা নাক, পুরু ঠোঁট। কিছুটা যেন সুদূর আফ্রিকা কোনো জাতি গোষ্ঠীর লোক তারা। এই গ্রামে আসা যেকোনও মানুষ এর হঠাৎ মনে হবে তারা যেন আফ্রিকার কোনও গ্রামের পরিবেশে পৌছে গেছে। কিন্তু আফ্রিকার জনগোষ্ঠীর লোক এত দূরে এই ভারতের গ্রামে এল কিভাবে।
গুজরাটের জাম্বুর গ্রামটি ভারতের আফ্রিকা নামে পরিচিত। জাম্বুর গ্রামের অধিবাসীরা আফ্রিকার বান্টু শ্রেনীর মানুষ। এরা আফ্রিকার বংশোদ্ভূত। কিন্তু দীর্ঘদিন ভারতে থেকে এদের ভাষা গুজরাটি।
ভারতে বসবাসকারী আফ্রিকার এই জাতিকে ডাকা হয় হাবসি নামে। ভারতে হাবসিদের আগমন মূলত ক্রীতদাস হিসাবে। আরবের ক্রীতদাস ব্যবসায়ীরা হাবসিদের ভারতে এনে বিক্রী করতে শুরু করেছিল। ৬২৮ খ্রিস্টাব্দে, আফ্রিকান ক্রীতদাসদের আরবের প্রথম জাহাজটি গুজরাটের ভারুচ বন্দরে এসে পৌঁছেছিল। একসময় আরবদের হাত থেকে আফ্রিকার ক্রীতদাস ব্যাবসার অধিগ্রহণ নেয় পর্তুগিজেরা। হাজার হাজার হাবসি সম্প্রদায়ভুক্ত কে পর্তুগিজরা জাহাজে করে নিয়ে আসত ভারতে। পর্তুগিজদের মতই আফ্রিকা থেকে হাবসিদের ধরে এনে বিক্রি করতে শুরু করেছিল ডাচ, ফরাসি ও ইংরেজ ব্যবসায়ীরাও।
ঊনবিংশ শতাব্দীতে পৃথিবী থেকে দাসপ্রথাকে অবলোপ করা হয়। সেই সময় ভারতের নানা জায়গায় ক্রীতদাস হিসেবে থাকা হাবসিরা স্বাধীন থাকতে সেই ছেড়ে পালিয়ে যায়। হাবসিদের বড় একটি গোষ্ঠী এসে বাসা গেরেছিল পড়েছিল গুজরাটের জঙ্গলে। সেই থেকে তারা সেখানেই আছেন।
আজ ভারতে বাস করেন প্রায় সত্তর হাজার হাবসি। তবে তারা হাবসি ক্রীতদাসের অন্ধকারময় ইতিহাস নিজেদের জীবন থেকে মুছে ফেলতেই নিজেদের পরিচয় দেন সিদ্দি।