কিছুদিন আগে পর্যন্ত, বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করতেন যে যৌন প্রজনন ছাড়া কোনো প্রাণী প্রজাতি খুব বেশি দিন পৃথিবীর বুকে টিকে থাকতে পারে না। কিন্তু একটি নতুন সমীক্ষা এই বিশ্বাস এর উল্টোদিকে হাঁটে। যেখানে এর উল্টোটাই দেখা গেছে।
যে কোনো প্রাণীর মধ্যেই স্ত্রী প্রাণী এবং পুরুষ প্রাণীর মধ্যে জৈবিক আকর্ষণ এবং যৌনতা স্বাভাবিক একটি বিষয়। এর উপর ভিত্তি করেই তারা পৃথিবীতে বংশরক্ষা করে থাকে। কিন্তু একটি ছোট পোকার প্রজাতি, যা নাকি আকারে এক মিলিমিটারের মাত্র এক-পঞ্চমাংশ, বিজ্ঞানীদের প্রমাণ করতে সাহায্য করেছে যে প্রাণীরা যৌনসঙ্গম ছাড়াই খুব দীর্ঘ সময় পৃথিবীর বুকে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারে। এই প্রাণীর নাম ওপ্পিয়েলা নোভা। এটি গুবরে পোকার প্রজাতিভুক্ত।
ওপ্পিয়েলা নোভা নামের এই পোকাটি কীভাবে এই আশ্চর্য সাধন করছে! যৌনতা ছাড়া কীভাবে বংশবৃদ্ধি করছে? বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, প্রাণীটি প্রকৃতির সৃষ্ট নিয়মের বাইরে কোনো ধাঁধা খেলছে। কেননা এই প্রজাতির মধ্যে সকলেই স্ত্রী প্রাণী। কোনো পুরুষ নেই। কেবল স্ত্রী প্রাণীর মাধ্যমে প্রজনন করে বংশরক্ষা করে প্রাণীটি টিকে আছে হাজার হাজার বছর।
অনেকের নানারকম মত আর বিভিন্ন রকমের তত্ত্ব আছে এই ব্যাপার নিয়ে। এই সমস্ত তত্ত্ব গুলির মধ্যে একটি হলো পার্থেনোজেনেসিস প্রজনন। এই তত্ত্ব অনুযায়ী এটি একটি অযৌন প্রজনন প্রক্রিয়া, যেখানে ভ্রূণ পরিণত হয় ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর নিষিক্ত হওয়া ছাড়াই। এই রকম ঘটনা বিজ্ঞানীদের মতে অত্যন্ত বিরল বলা চলে বিরলতম ঘটনা। এই প্রাণীটি নিজের বংশ বিস্তার করছে কোনও রকম পুরুষ ছাড়াই, কারণ এক্ষেত্রে কোনও পুরুষ প্রজাতিই নেই। বহুকাল যাবৎ ওপ্পিয়েলা নোভা নিয়ে অনেক বিজ্ঞানী গবেষণা করে যাচ্ছিলেন। বিজ্ঞানীদের মতে এই প্রাণী যে প্রজনন ক্রিয়া অবলম্বন করছে বংশ বিস্তার করতে তা আমাদের কাছে অজানা। “উদাহরণস্বরূপ, এই প্রাণীদের মধ্যে কিছু ধরনের ‘গুপ্ত’ যৌন বিনিময় প্রথা থাকতে পারে যা জানা যায়নি। বা এখনও জানি না,” জানিয়েছেন গবেষক ডঃ আলেকজান্ডার ব্র্যান্ড। মূলত বংশ বাড়ানোর জন্যে এরা নিজেদের ক্লোন তৈরি করা সত্ত্বেও, তারা এখনও জেনেটিক বৈচিত্র্য প্রবর্তন করতে এবং তাদের পরিবেশের সাথে ভিন্ন উপায়ে মানিয়ে নিতে সক্ষম। পৃথিবীতে অজানা রহস্যের মধ্যে এটি অন্যতম যার উত্তর বোধহয় বিজ্ঞানীরা আজও খুজেঁ বেড়াচ্ছে।