অন্যান্য বিষ্ণু মন্দির অপেক্ষা এই মন্দিরটি একটি অন্যতম বিষ্ণু মন্দির যা অন্ধ্রপ্রদেশের চিত্তুর জেলায় অবস্থিত তিরুপতির তিরুমালা শৈলশহরে অবস্থিত৷ কথিত আছে, মানব জাতিকে কলিযুগে প্রাপ্ত দুঃখ কষ্ট থেকে মুক্তি দিতেই ভেঙ্কাটেশ্বর রূপে তিরুপতি আগত হন৷ তামিল ভাষায় তিরুমালা শব্দের অর্থ দাঁড়ায় পবিত্র পাহাড়। প্রতিদিন প্রায় কয়েক লক্ষ ভক্ত আসেন এই তিরুপতির মন্দিরে৷ এই মন্দির চত্বরের যে মূল মন্দির টি আছে টা পুরোই সোনা দিয়ে মোড়া। এই মন্দির দক্ষিণের মন্দিরগুলোর মতোই দেখতে। বহু দেব দেবীর মন্দির রয়েছে মন্দিরের অন্দরে। তিরুপতি বালাজীর দর্শন পাওয়া যায় দীর্ঘ লাইন অতিক্রম করেই।
তিরুপতির এই মন্দির ঘিরে রয়েছে বেশ কটি রহস্য। বেশ কিছু পৌরাণিক গাঁথা যা সম্পর্কে অনেকেই জানেন না।
প্রথমত এই তিরুমালা ভেঙ্কটেশ্বর মন্দিরে যে দেব বিগ্রহ রয়েছেন সেটি কারো দ্বারা নির্মিত হয়। বিশ্বাস এই মন্দিরে অধিষ্ঠিত স্বয়ং তিরুপতি বালাজি৷ দেব বিগ্রহটি ১১০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের একটি স্থায়ী তাপমাত্রাতেই থাকে৷ আবার কোনো কোনো সময় এই মূর্তির গায়ে বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখা যায় ৷ কোনও বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানী আজ পর্যন্ত এমনটা ঘটার কারণের ব্যাখ্যা দিতে সক্ষম হননি।
অন্ধ্রপ্রদেশে অবস্থিত এই তিরুপতি বালাজির মন্দির নিয়ে একটি বিষয় সেই বহু সুপ্রাচীন কাল থেকেই প্রচলিত আছে। এই মন্দিরে আগত ভক্তরা টাকা পয়সা, সোনা ইত্যাদি দান করার পাশাপাশি নিজেদের মাথার চুলও দান করে আসেন। তবে কেন মানত করে বা ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে ভক্তরা চুল দান করেন তার পেছনে রয়েছে এক পৌরাণিক ঘটনা।
কথিত আছে, ভগবান ভেক্টেশ্বরের একবার পাহাড়ে মাথায় বসে থাকার সময় এক নাবালক রাখাল বুঝতে না পেরে তার মাথায় আঘাত করেছিলেন। তখন ভেক্টেশ্বরের মাথার কিছু অংশের চুল এর দ্বারা ছিড়ে পড়ে যায়। নীলাদেবী নামে এক গন্ধর্ব রাজকুমারী নজরে পড়ে এই ঘটনাটি। ভগবান ভেক্টেশ্বর ভীষণ সুদর্শন ও মনোহর সৌন্দর্যের অধিকারী ছিলেন। তাই তখন রাজকুমারী নীলাদেবী চিন্তা করেন, ভগবান ভেক্টেশ্বরের এমন সুন্দর মুখে কোন খুঁত থাকা উচিত নয়। সেই ভাবা মাত্রই গন্ধর্ব রাজকুমারী নীলাদেবী নিজের মাথার রেশম ও মোলায়েম চুল কেটে জাদুবলে সেই চুল ভগবান ভেক্টেশ্বরের মাথায় প্রতিস্থাপন করেন।
এতে ভগবান ভীষণ প্রসন্ন হলেন এবং প্রতিশ্রুতি দিলেন, এই ভেক্টেশ্বর মন্দিরে আসা যত ভক্ত তাঁদের নিজের মাথার চুল ভগবান ভেক্টেশ্বরকে অর্পণ করবেন সেই চুল আসলেই পৌঁছবে রাজকুমারী নীলাদেবীর কাছে। এইভাবে আজও এই মন্দিরে আসা সকল ভক্তগণ নিজেদের চুল ভগবানের উদ্দেশ্যে উতসর্গ করেন।