ভারত বহু সুপ্রাচীন মন্দিরের দেশ! আর সেই সমস্ত প্রাচীন মন্দিরে রয়েছে কত না রহস্য, কত না অজানা ঐতিহাসিক গুরুত্ব। তেমনই এক মন্দির হল অন্ধ্রপ্রদেশের কুরনুল জেলার ইয়াগন্তী উমা মহেশ্বরের মন্দির। এই মন্দিরের ঐতিহাসিক গুরুত্বের কথা অনেকেরই জানা। এই প্রাচীন মন্দিরটি ঐতিহাসিক, আধ্যাত্মিক দিক থেকে তো বটেই, পাশাপশি চর্চিত একটি রহস্যজনক ঘটনার কারণে। ভগবান শিবের এই মন্দিরটি খুবই জাগ্রত মানা হয়। এখানে মহাদেবের পাশপাশি পূজিত হন তাঁর বাহন নন্দী মহারাজ। আর রহস্য তাকে ঘিরেই। এই মন্দিরের নন্দীর মূর্তি নিয়ে একটি প্রচলিত বিশ্বাস রয়েছে। এই মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত নন্দীর পাথরের মূর্তিটি নাকি আস্তে আস্তে আয়তনে বাড়ছে। এই মন্দিরের ঘিরে চর্চিত এক পৌরাণিক কাহিনী বলে এই ভাবেই বড় হতে হতে একদিন নন্দীর দেহে প্রাণ প্রতিষ্ঠা হবে। তিনি প্রাণ ফিরে পেলেই এই কলি যুগের সমাপ্তি হবে।
মন্দিরের পুরোহিত স্থানীয়দের বিশ্বাস প্রতি ২০ বছর অন্তর নন্দীর এই পাথরের মূর্তি ১ ইঞ্চি করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই তত্ত্বে সিলমোহর দিয়েছে খোদ আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (ASI)-র আধিকারিকরা। তবে বিশেষজ্ঞদের মত বলছে যে পাথর ব্যবহার করে এই মূর্তি তৈরী হয়েছে তা প্রাকৃতিক ভাবেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর বৃদ্ধি পাওয়ার হারও ভীষণ নগণ্য। সুতরাং এটি খুব একটা অবাক করা ঘটনা নয়। নন্দীর মূর্তি আকারে বাড়তে দেখে মন্দির কর্তৃপক্ষ মূর্তির পাশ থেকে একটি থাম সরিয়ে ফেলেছেন।
পৌরাণিক কথা অনুযায়ী ঋষি অগস্ত্য কর্তৃক এই মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত হয় উমা মহেশ্বর ও নন্দীর মূর্তি।অগস্ত্য মুনি এই স্থানে ভেঙ্কটেশ মন্দির প্রতিষ্ঠা করতে এসেছিলেন। মন্দির প্রতিষ্ঠা হলেও ঈশ্বরের মূর্তি স্থাপন করার সময় আঙুল ভেঙে যায়। ঘটনার কারণ জানতে ঋষি অগস্ত্য ধ্যানে বসলে মহাদেব তাঁকে মন্দির প্রতিষ্ঠার আদেশ দেন। তারপর খ্রীষ্টপূর্ব ১৫ শতাব্দীতে সাংমা বংশীয় রাজা হরিহর বুক্কা নির্মাণ করেছিলেন এই মন্দির।
এখানেই শেষ নয় এই মন্দিরের আশ্চর্যের। মন্দির চত্বরে দেখা যায় না কোনো কাকের। হিন্দু পুরাণে অনুযায়ী, অগস্থ্য মুনি এই মন্দিরে তপস্যা করছিলেন। সেই সময় আশেপাশে কাক তার তপস্যায় খুব ব্যাঘাত ঘটিয়েছিল। রেগে গিয়ে মুনি অভিশাপ দিয়েছিলেন যাতে কখনও কোন কাক এই মন্দিরের ধারে কাছেও না আসতে পারে।
আরো একটি রহস্য আছে এই মন্দির ঘিরে। এখানে আছে একটি পুষ্করিনী যাতে বারো মাস জল থাকে। আর মন্দিরে অবস্থিত নন্দীর মূর্তির মুখ থেকেই অনবরত জল পড়ে। কোথা থেকে আসছে এই জল তা কেউ জানতে পারেনি।