আচ্ছা ভেবে দেখুন তো যদি পৃথিবীর বায়ু মণ্ডলে উপস্থিত অক্সিজেনের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে যায়। কি কি হতে পারে তাহলে! ভেবে দেখেছেন কখনও? আমরা সারা দিনে প্রায় ২৩০০০ বার নিঃশ্বাস প্রশ্বাস গ্রহণ করি। আমাদের প্রতিটি জীবন্ত কোষের আর মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা অক্ষুন্ন রাখতে অপরিহার্য অক্সিজেন। পৃথিবীর বায়ু মণ্ডলে অক্সিজেনের মাত্রা ২১ ভাগ। আর ৭৮ ভাগ নাইট্রোজেন। বায়ুমন্ডলের বড় অংশ জুড়ে না থাকলেও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই অক্সিজেন। মোট কথা বেঁচে থাকতে অবশ্যই দরকার অক্সিজেন। কিন্তু যদি অক্সিজেনের মাত্রা হঠাৎই বেড়ে যায়।
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে গেলে কিছু কিতপটঙ্গ যেমন মাকড়সা এবং আরশোলার মতো কীটপতঙ্গ আকৃতিতে বিশাল হয়ে উঠবে। আজ থেকে ৩০০ মিলিয়ন বছর আগে, ডাইনোসরের সময়ে, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের মাত্রা ছিল প্রায় ৩০% অক্সিজেন ছিল। সেই সময়ে, পোকামাকড় আকার বড় ছিল। প্রায় পাখির আকৃতির মত। এর কারণ হল অক্সিজেন স্তর দ্বিগুণ করার অর্থ আমাদের বায়ুমণ্ডলে আরও বেশি অক্সিজেন থাকলে পোকামাকড় যে ট্রাকিয়ার মাধ্যমে শ্বাস গ্রহণ করে তার দ্বারা আরো বেশি অক্সিজেন ঢুকবে। আর বিজ্ঞানীরা বলেন এতে তাদের দেশের কোষের গঠন দ্রুত হবে আর তারা বড়ো আকারের হবে।
মানবদেহে কি প্রভাব!
বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের পরিমাণ দ্বিগুণ হলে আপনার শরীরে অক্সিজেন বেশী প্রবেশ করবে, আপনার রক্ত সঞ্চালন উন্নত হবে এবং আপনার এনার্জি আগের তুলনায় অনেক অনেক বেশি হবে। আপনার মস্তিষ্ক বেশী কাজ করবে এবং আপনার ঠান্ডা কম লাগবে। কিন্তু সব ভালো হবে বলা যায় না। বেশ জটিল কিছু স্বাস্থ্য সমস্যাও দেখা দিতে পারে। যেমন অক্সিজেন বেশী ঢুকলে সময়ের সাথে দেখা দেবে অক্সিজেন টক্সিসিটি। এই অতিরিক্ত অক্সিজেন ফুসফুসের ক্ষতি করতে হতে পারে, দৃষ্টিশক্তি কমজোর করতে পারে এবং দেহের কোষগুলির মৃত্যু হতে পারে।
অক্সিজেনের বৃদ্ধি শরীরের বিপাক ক্রিয়াকেও ত্বরান্বিত করবে। এর কারণে আপনার শারীরিক অঙ্গগুলির অতিরিক্ত পরিশ্রম করবে যা আপনার শরীরের জন্য ক্লান্তি এবং মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনবে, আক্ষরিকভাবে আপনাকে আপনি পথ চলতে চলতে হঠাৎ ক্লান্তিতে রাস্তায় পড়ে যেতে পারেন। অসুস্থতায় নয় বরং ক্লান্তিতে মৃত্যু বেশি হবে।
প্রকৃতিতে কি পরিবর্তন আসবে!
অক্সিজেনের উপস্থিতি আগুন জ্বলতে সাহায্য করে। তাই দাবানল লাগলে সহজে নিভবে না। প্রায় সব কিছুতেই খুব অল্পতেই আগুন লেগে যেতে পারে।
অক্সিজেনের ঘনত্বের সাথে বায়ুমণ্ডল ভারী হবে, লিথোস্ফিয়ারকে আমাদের বায়ুমণ্ডলের চেয়ে ভারী করে তুলবে। এর ফলে জলের ফোঁটাগুলো হাইড্রোজেন পারক্সাইডে পরিবর্তিত হবে।
গাছপালা আগের তুলনায় কম সালোকসংশ্লেষ করবে। কেনোনা বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইড কমে যাবে।
উচু পাহাড়ে উঠতে কষ্ট কম হবে।
পাখি আরো উচু দিয়ে উড়বে।