শ্রদ্ধা কাপুরের স্ত্রী সিনেমাটির কথা মনে আছে। স্ত্রী নামক কোনো আত্মার ভয়ে পুজোর সময় গ্রামের পুরুষেরা পুরুষের বেশে নয়, বরং স্ত্রীর বেশে বাইরে বেরোতেন। বিষয়টি কিন্তু শুধু সিনেমাতেই আছে তা নয়। বাস্তবেও এমন ঘটনার উদাহরণ আছে। গুজরাটের অহমেদাবাদের বারোট সম্প্রদায়ের পুরুষেরা বহুকাল ধরে নবরাত্রির অষ্টম রাতে শাড়ি পরেই বাইরে বেরোন। বিগত প্রায় দুইশ বছর ধরে ওই প্রথা চলে আসছে। এমনকি শেষ নবিরাত্রির সময়ও সেই রীতি পালিত হয়েছে। আহমেদাবাদে শাড়ি পরেই ‘শেরি গড়বা’ খেলতে দেখা গিয়েছে পুরুষদের।
কিন্তু বিষয়টি কী? কেন এই ভাবে নারী সাজেন নবরাত্রির দিনে ওই সম্প্রদায়ের পুরুষেরা? এলাকাবাসীর বক্তব্য, তাঁরা প্রাচীন এক অভিশাপের হাত থেকে মুক্তি পেতেই ওই রীতি মেনে চলেন। লোকমুখে প্রচলিত আছে, আজ থেকে প্রায় দুশো বছর আগে অহমেদাবাদে সাদুবা নামের এক মহিলা বাস করতেন। শোনা যায়, একবার বিপদে পরে নিজের সম্মান রক্ষার্থে এলাকার পুরুষদের কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন সাদুবা ওরফে সাদুবেন। কিন্তু, উপস্থিত এলাকার পুরুষরা সে সময় তাঁকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন নি। এরই মধ্যে মহিলার পুত্রকে মেরে ফেলা হয়। তারপরেই নাকি ঐ অঞ্চলের পুরুষদের অভিশাপ দিয়েছিলেন সাদুবা। পরবর্তীতে সাদুবার দেওয়া অভিশাপ খন্ডন করার জন্যই সাদুবাকে দেবীর স্থানে বসানো হয়। তাঁর প্রতিহিংসার হাত থেকে বাঁচতেই দেবী পুজোর দিন নবরাত্রি বা দুর্গা অষ্টমীর দিন ওই এলাকার পুরুষেরা মহিলাদের শাড়ি পরে ‘সাদু মাতা নি পোল’-এ আসেন এবং মেয়েদের সঙ্গেই গড়বা নাচে অংশ গ্রহণ করেন।
মূলত নিজেদের সন্তানের মঙ্গল কামনার উদ্দেশ্যেই মহিলা বেশে ওই পুজোর আয়োজন করেন স্থানীয় পুরুষেরা। আসলে সাদুবার প্রতিহিংসার মুখে পড়তে চান না কেউই। মূলত সামাজিক অধিকার না দেওয়া এবং বিপদের সময় কেউ এগিয়ে না আসার জন্যই সাদুবার মনেও ক্ষোভ জন্মেছিল। এমনটাই দাবি এলাকার প্রবীণদের। আর তাই আজও বারোট সম্প্রদায়ের সকল পুরুষই নবরাত্রির পুজোর দিনে শাড়ি পড়েই ঘোরাফেরা করেন রাস্তায়। এমনকি মহিলাদের সাথে মহিলার বেশেই প্রত্যেকেই নিয়ম করে গড়বাও খেলেন।
স্ত্রী সিনেমার মতন কোনো অশরীরী নয় সাদুবা দেবী রূপেই পুজো পান ওই এলাকার মন্দিরে। তাকে সন্মান জানিয়ে একটি মন্দিরও তৈরি করা হয়েছে। তবে সমাজে জায়গা অর্জন করার জন্য সিনেমার স্ত্রী-র যে লড়াই, তার সঙ্গে বেশ মিল আছে গুজরাটের ওই অহমেদাবাদের এই ঘটনার।