পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ের নিকটে ছোট্ট একটা স্টেশন। চারপাশের টিলা আর সবুজের অপূর্ব প্রাকৃতিক পরিবেশে এই স্টেশনকে আরো সুন্দর করে তুলেছে। কিন্তু এই জায়গায় কেউ ভুলেও আসতে চায় না তাও। কিবজেন এক অজানা আতঙ্কে এই স্টেশন খালি পড়ে রয়েছে প্রায় গত পঞ্চাশ বছর ধরে। স্থানীয়দের কাছে এটি পরিচিত ‘ভূতুড়ে স্টেশন’ হিসাবে।
অথচ বহুদিন আগে এমনটা ছিল না। পুরোটাই স্বাভাবিক ভাবেই চলত। রোজ এই স্টেশনে ট্রেন দাড়াতো। ট্রেন থেকে লোক স্টেশনে নামত, আবার ট্রেনে উঠত। রেলের টিকিট কাউন্টারে থাকতো টিকিট নেওয়ার ভীড়, স্টেশন চত্বরে সাধারাণ মানুষের আনাগোনা সবটাই স্বাভাবিক মতোই চলত। কিন্তু এখন চতুর্দিক শুনশান। হঠাৎ করেই যেন একদিন সব স্তব্ধ হয়ে গেল। সাথে শুরু হল অশরীরির উৎপাত। কিন্তু কেন হঠাৎ এমন হল?
ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় স্বাধীন ভারতে ১৯৬০ সালে ভারতীয় রেলওয়ে ও স্থানীয় সাঁওতালদের রাণী, শ্রীমতী লাচন কুমারীর এই দুইয়ের মিলিত উদ্যোগে বেগুনকোদর স্টেশনটি নির্মাণ করা হয়।
এরপর কাটে অনেকদিন। কিন্তু অনেক বছর আগে একদিন মধ্যরাতে এখানে খুন হন স্টেশন মাস্টার এবং তাঁর স্ত্রী। মারা যায় মেয়েও। স্টেশনের নিকটে এক কুয়োর ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয় তাঁদের মৃতদেহ। সেই থেকেই নাকি এই প্লাটফর্মে অশরীরী কার্যকলাপের সূত্রপাত হয়। জানা যায়, ওই ঘটনার পরই রাতারাতি সেখান থেকে পালিয়ে যান সমস্ত রেলকর্মী। পরবর্তী সময়ে যাঁরাই এখানে কাজে এসেছেন বেশিদিন টিকতে পারেননি এখানে। দিনের বেলাতেই নাকি নাকি চারপাশে ভুতুড়ে কোনো আনাগোনা অনুভব করতেন তাঁরা। এই ভূতের ভয়ের কারণ দেখিয়ে সবাই বদলি নিয়ে এখান থেকে চলে যেতেন। এমন হতে হতে লোকমুখে ক্রমে শোনা যেতে লাগল এই ষ্টেশনের নানান অলৌকিক কাহিনী। কেউ বলতেন, অন্ধকার হলেই এই স্টেশনে নানারকম আর্তনাদ শুনতে পাওয়া যায়, আবার কেউ কেউ বলেন এই স্টেশন দিয়ে ট্রেন পার হওয়ার সময় কোনও অশরীরী ছায়ামূর্তি ট্রেনের আগে আগে চলে যায়। সে থেকেই ওই স্টেশনের নাম হয়ে গিয়েছিল ‘ভূতুরে স্টেশন’। বন্ধ হয়ে যায় এই স্টেশনে আর ট্রেনের দাড়ানো। কোনো ভুতুড়ে হানাবাড়ির মতো পড়ে থাকে শুধু ইট পাথরের তৈরী স্টেশন বিল্ডিংটা।
টানা ৫০ বছর বেগুনকদর স্টেশন এভাবেই জনমানবহীন হয়ে পরে থাকার পর ২০১০ সালে সেই স্টেশনকে আবার চালু করার উদ্যোগ শুরু হয়। আবার ট্রেনও থামতে শুরু করে। সম্প্রতি এলাকার সাধারণ মানুষ স্থানীয় প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে বেগুনকোদর ষ্টেশনের গায়ে লেগে থাকা অশরীরীর যে কাহিনী লোকমুখে ছড়িয়েছে তা দুর করতে সচেষ্ট হয়েছেন। তাও এখনও এই স্টেশন চত্বর যথেষ্ট জনমানবহীন, শুনশান। বিকেল ৫ টা ৫০ এর একটি ট্রেন চলে যাওয়ার পর আর কোন ট্রেনই এখানে থামে না। রাতে কেউ আসেও না।