Dainik Sangbad – দৈনিক সংবাদ
Image default
ট্রেন্ডিং

‘ভাদর মাসে ভাদু পূজা’, জানেন কি ভাদু উৎসবের পেছনে রয়েছে কোন কাহিনী?

ভাদু উৎসব গোটা ভাদ্র মাস (Bhadra Month) ধরেই চলে। সঙ্গে ভাদুগান গাওয়া হয়। সাধারণত এই গানের বিষয়বস্তু গ্রামের মহিলা, বিশেষত গৃহবধূদের জীবনের কাহিনীই। তাছাড়া পাঁচালির সুরে গাওয়া হয়ে থাকে পৌরাণিক ও সামাজিক ভাদুগানগুলি। রামায়ণ, মহাভারত ও রাধা-কৃষ্ণের প্রেমের পৌরাণিক কাহিনী বা বারোমাস্যা সেই গানগুলিতে ফুটে ওঠে। প্রধানত ভাদু উৎসব অনুষ্ঠিত হয় পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূম, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় এবং লাগোয়া, বিহার, ঝাড়খণ্ডের দু-একটা জেলায়।

বর্ষাকালে আদিবাসী, সাঁওতালদের মধ্যে করম গান ও উৎসবে পালন করার রীতি রয়েছে। তা-ও ভাদ্র মাসে বিশেষ ভাবে । আশুতোষ ভট্টাচার্য বর্ষা উৎসবের এই করম গানের হিন্দু সংস্করণ হিসেবে ভাদু গানকে ধরেছে। তিনি আর্যেতর সমাজ উদ্ভূত ধরে, হিন্দু ধর্মের পৌত্তলিকতার প্রভাবজাত বলেছেন ভাদু গানকে।

লোক-উ়ৎসব ভাদু গান-কেন্দ্রিক। নানা কিংবদন্তি পেয়েছি সে উৎসবের উৎস খুঁজতে গিয়ে। কিংবদন্তির বিভিন্ন রূপ কেমন বিভিন্ন গবেষক, লেখক, ভাদু শিল্পীদের দেওয়া তথ্যানুসারে ? ভাদু কে? নানা কিংবদন্তী রয়েছে এ নিয়ে। যেমন, অনেকে মনে করেন ভাদু শব্দটি এসেছে ‘ভাদ্র’ মাস থেকে। আবার কেউ, ভাদু মানে লক্ষ্মী বলেন। যেহেতু বিভিন্ন সময়ে লক্ষ্মী পূজিত হন, তাই ভাদু পুজোর প্রচলন হয় ভাদ্র মাসের লক্ষ্মীকে পৃথক ভাবে চিহ্নিত করার জন্য। রয়েছে অন্য মতও । সেই মতে ভাদুর সঙ্গে বাস্তবের কাহিনি জড়িয়ে আছে। তবে করুণ কাহিনী এই উৎসবের নেপথ্যে রয়েছে। বেশকিছু গল্প শোনা যায় লোকমুখে ভাদু উৎসব তথা এই গানের প্রচলনকে ঘিরে ।

সবচেয়ে প্রচলিত যে গল্প তারমধ্যে সেটি হল, নীলমণি সিংদেওয় পঞ্চকোট রাজপরিবারের রাজার তৃতীয় কন্যা ছিলেন ভদ্রাবতী (কেউ কেউ বলেন ভদ্রেশ্বরী)। বিয়ে ঠিক হওয়ার পরেও চরম মানসিক আঘাত পান তিনি হবু স্বামীর অকাল মৃত্যুতে। তারপরেই ভদ্রাবতী শোকে আত্মহত্যা করেন। হবু বর ও বরযাত্রীরা আসলে বিয়ে করতে আসার পথে ডাকাতদলের হাতে নিহত হন। স্বামীর চিতায় সেই শোকেই নিজেকে শেষ করে দেন তিনি। নীলমণি সিংদেও ভাদুগানের (Bhadu Song) প্রচলন করেন মেয়ের স্মৃতিকে মানুষের মধ্যে বাঁচিয়ে রাখতেই ।

আবার এক মতে, কাশীপুরের রাজার মেয়ে ভাদু। বর্ধমানের রাজকুমারের সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয়েছিল। বিয়ের দিন রাজকুমারের ম়ৃত্যু ঘটে লেঠেলদের হাতে বর বেশে যাত্রা পথে। আত্মহত্যা করেন ভাদু। অনেকে আবার মীরাবাই-এর মিল পান ভাদুর সঙ্গে। রাজকন্যা ভাদু সেখানে , জন্ম থেকে তিনি কৃষ্ণভক্তি পরায়ণা মীরার মতো। ভাদু মন্দিরে নিজের প্রাণ ধ্যানস্থ অবস্থায় ত্যাগ করেন রাজা তাঁর বিবাহ ঠিক করলে। কেউ কেউ ভাদুকে ভদ্রাবতী বাঁকুড়ার মল্ল রাজাদের কন্যা বলে মনে করেন। ভাদু পুজোর প্রচলন তাঁর অকালমৃত্যুতে। এখানে, ভাদুর জন্ম এবং মৃত্যু দুই-ই ভাদ্র মাসে। তাই হিন্দুদের কোনও বিবাহ থাকে না ভাদ্র মাসে।

আগে ভাদুর কোনও মূর্তি ছিল না বলে শোনা যায়। তবে মূর্তির প্রচলন হয় পরবর্তীকালে। এরমধ্যে ভাদুর মূর্তি বিশেষভাবে দেখা যায় বীরভূমে। অঞ্চলভেদে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানও পালিত হয় মূর্তি নিয়ে। ভাদুর মূর্তি গোটা মাস শেষে ভাদ্র সংক্রান্তির দিন বিসর্জন দেওয়া হয়।

Related posts

টাকার অভাবে বন্ধ চিকিৎসা, শিকলে ছেলেকে বেঁধে রেখেই দিন কাটছে নিরুপায় বাবা মার

News Desk

টিকাকরণ উল্টে শক্তি বাড়াচ্ছে করোনার,’বিস্ফোরক নোবেলজয়ী ভাইরোলজিস্ট

News Desk

ছাত্রীকে পড়াতে এসে গৃহ শিক্ষকের অসংযত আচরণ! টিউশন বন্ধ করেও মেলেনি রেহাই..

News Desk