বন্ধুদের সঙ্গে দীঘা বেড়াতে গিয়ে সমুদ্রে নেমে ১ দিন আগেই নিখোঁজ হয়েছিল নদিয়ার ঋতম সাধুখাঁ। ওড়িশার উদয়পুর সি বিচ থেকে উদ্ধার হয়েছে তার মৃতদেহ। এই ঘটনার ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই বন্ধুদের সঙ্গে স্নান করতে নেমে সমুদ্রে তলিয়ে মৃত্যু হল হাওড়ার শিবপুর মন্দিরতলার বাসিন্দা সৈকত দত্তর (১৭)। সোমবার বিকেল অবধিও তাঁর খোঁজ পায়নি পুলিশ।
দীঘার সমুদ্রে দুর্ঘটনায় মৃত্যু কোনো নতুন কিছু নয়। এক পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি বছরে দিঘার সমুদ্রে স্নান করতে নেমে গড়ে ৬৭ জন দুর্ঘটনার সম্মুখীন হন আর তলিয়ে মারা যান। করোনা আবহে লকডাউন চলাকালীন সমুদ্রে স্নানের ওপর প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা থাকায় এবং সেই ভাবে পর্যটকের উপস্থিতি না থাকায় সমুদ্রে দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু লকডাউনে একটু ছাড় মিলতেই আবারও এই ধরণের ঘটনা বাড়তে শুরু করেছে। ফলে পর্যটকদের সমুদ্র স্নানের সময় অনেক বেশি নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবি তুলেছেন দীঘার পর্যটকরা।
যদিও দীঘায় এই ধরণের সমুদ্রে নেমে দুর্ঘটনার জন্য পর্যটকদের নিয়ম না মানাকেই দায়ি করছেন দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের কর্তারা। সেই পর্ষদের আধিকারিক মানস কুমার মণ্ডল বলেন, ‘ সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের সমুদ্রে স্নানের ব্যাপারে আরও সচেতন হতে হবে।’
কিন্তু কেন দিঘার সমুদ্রে দুর্ঘটনায় এত মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে? সমুদ্র গবেষকরা জানাচ্ছেন, ‘দিঘার সমুদ্রে স্রোতের টান বেশী। একে জলের কারেন্ট বলা হয়। সাধারণ ভাবে সমুদ্রে স্রোতে একটা স্রোত জলের ওপরের ভাগে আর একটা স্রোত থাকে জলের নীচের ভাগে। বিভিন্ন কারণে স্রোতের গতিবেগ আর দিশার পরিবর্তন হয়। সমুদ্রে ঢেউ পাড়ে এসে ভাঙ্গে দিয়ে আবার তা ফিরে যায়। আর ঢেউ ফিরে যাওয়ার সময় সৈকতের বালি, পাথর ইত্যাদির সঙ্গে যা থাকে তাই টেনে নিয়ে যায়। এই স্রোতের টান বা জলের কারেন্ট ঢেউয়ের নীচের অংশে থাকে। যদি সমুদ্রে নেমে কোনো ভাবে কেউ যদি এই স্রোতের মধ্যে পড়ে তাকেও সেই স্রোত টেনে নিয়ে যায়।’
সেই কারণে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বার বার সমুদ্রে স্নান করতে নেমে বুক জলের থেকে বেশি দূরত্বে না যাওয়ার জন্য নিষেধ করা হলেও পর্যটকরা এই সব না শুনে স্নান করতে করতে আরও গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করতেন, এতেই আরো দুর্ঘটনার পরিস্থিতি তৈরী হয়। তাছাড়া সমুদ্রে নানা কারণে তৈরি হতেও পারে ঘূর্ণি। আর সেই চোরা স্রোত জলের উপরে দেখাও যায় না। স্রোতের গতিবেগ বোঝার জন্য সমুদ্রে একটি ওয়েভ র্যাডার বসানো হয়েছিল সমুদ্রের অভ্যন্তরে। কিন্তু সেটি জলের টানে কোনো কারণে ছিঁড়ে ভেসে গিয়েছে। এরপর আর নতুন করে যন্ত্র বসানো হয়নি।’