তলপেটে অসহ্য যন্ত্রণা। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের (Calcutta Medical College) চিকিৎসকরা শীর্ণকায় রোগীকে OPD-তে দেখে আঁতকেই উঠেছিলেন। চৈতন্য সাহা (৪৬) প্রায় একবছর ধরে কিছুই খেতে পারছিলেন না। উত্তর ২৪ পরগণার বীজপুর থানার হালিশহরের বাসিন্দা তাঁর খাবারে অরুচি হয়েছে প্রথমটায় ভেবেছিলেন। দেখান একাধিক স্থানীয় ডাক্তারকে। হজমের ওষুধও খেয়েছিলেন গাদাগুচ্ছের। কিন্তু সমাধান হয়নি সমস্যার বছর ঘুরতে চললেও। না খেয়ে খেয়ে কঙ্কালসার চেহারা হয়েছিল চৈতন্য সাহার। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে সে সমস্যাই মিটল। পেট থেকে বোল্ডার আকারের মাংসপিণ্ড বেরোল। প্রায় সাড়ে পাঁচ কেজি ওজন।
এই খবরটি প্রকাশিত হয়েছে বাংলা সংবাদ মাধ্যম সংবাদ প্রতিদিনের এক প্রতিবেদনে।
ডাক্তার ধৃতিমান মৈত্রর OPD-তে রোগীর চেহারা দেখেই সন্দেহ হয়েছিল। তলপেটের সিটি স্ক্যান করানো হয় ব্রেস্ট এন্ডোক্রাইন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান রোগীর । সিটি গাইডেড নিডল বায়োপসি করা হয় । চিকিৎসকরা পেটের অভ্যন্তরের রাক্ষুসে ওই টিউমার আদতে রেট্রোপেরিটোনিয়াল সারকোমা (Retroperitoneal Sarcoma) বুঝতে পারেন। এটা এক ধরণের ক্যানসার! লম্বায় ৪০ সেন্টিমিটার, চওড়ায় ৩৫ সেন্টিমিটার, সবটুকু জায়গা নিয়ে নিয়েছিল অতিকায় ওই টিউমার গোটা পেটের।এক কোণায় পিত্তথলি, যকৃৎ, পাকস্থলীকে ঠেলে পাঠিয়ে দিয়েছিল ।
রোগী চুপসে যাওয়া পাকস্থলীর কারণেই খেতে পারছিলেন না। টিউমারটা তলপেটের ডানদিকের রেট্রোপেরিটোনিয়াম অংশ থেকে ডালপালা মেলেছিল । ডা. মৈত্রর জানান, টিউমারটি (Tumor) আকারে এতটাই মারাত্মক তার চাপে ডান দিকের কিডনিটিও সরে গিয়েছিল নিজের অবস্থান থেকে । শরীর থেকে বাদ দিতে গেলে প্রচুর রক্তক্ষরণের সম্ভাবনা থাকে ,এত বিশাল একটা টিউমার সেটি । সময়ও ৫ ঘন্টা লাগে । ওই রোগীর শরীর দীর্ঘদিন ধরে না খেয়ে থাকা সেই ধকল সহ্য করতে পারবে কি না তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়।
অস্ত্রোপচার করেন ডা. ধৃতিমান মৈত্র অত্যাধুনিক লিগাসিওর প্রযুক্তি ব্যবহার করে । ডা. রৌণক নন্দী, ডা. শতক্রতু বর্মন, ডা. হেমাভ সাহা, ডা. অন্বেষ বিশ্বাস, ডা. অন্তরীপ ভট্টাচার্য অস্ত্রোপচারে ডা. ধৃতিমান মৈত্রর সঙ্গে ছিলেন । লিগাসিওর প্রযুক্তিতে মাত্র দু’ঘন্টা সময় লাগে । বাইপোলার ইলেকট্রো সার্জিক্যাল ডিভাইস ব্যবহার করা হয় এই প্রযুক্তিতে। ক্যানসারের কোষ ধ্বংস করতে লো ভোল্টেজে উচ্চ মাত্রায় কারেন্ট দেওয়া হয় । ধমনীগুলোকে ৪ থেকে ৭ সেকেন্ডের মধ্যে ‘সিল’ করে দেওয়া যায় অস্ত্রোপচারের সময় বিশেষ পদ্ধতির মাধ্যমে । এতে রক্তক্ষরণ আটকানো যায় । আপাতত সুস্থ রোগী অস্ত্রোপচারের পর । ডা. মৈত্র জানিয়েছেন, টিউমারে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ জড়িয়ে ছিল । রোগী ভাগ্যবান এতটুকু আঁচড়ও লাগেনি যে কোনও অঙ্গের গায়েও ।