একদিকে যেমন পেট্রোলের দাম বেড়ে দাম বৃদ্ধি নিয়ে দেশ জুড়ে মানুষের কপালে চিন্তার ভাঁজ আবার তেমনি অপরদিকে প্লাস্টিক পরিবেশের জন্যে ভীষণ ক্ষতিকর। পরিবেশ দূষণ অন্যতম কারণ। এই দুই সমস্যা বর্তমানে ভীষণ বড় আকার ধারণ করছে। কীভাবে জ্বালানীর অপ্রতুলতা সমস্যা মিটবে আর কিভাবে প্লাষ্টিক রাক্ষসের হাত থেকে পৃথিবীকে বাঁচানো যায় তা নিয়ে দিন রাত পরীক্ষা নিরীক্ষা করে চলেছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু সম্প্রতি এক বাঙালি বিজ্ঞানী ড. পুণ্যব্রত চক্রবর্তী নিয়ে এলেন এমন এক যন্ত্র যা এই পরিবেশ দূষণকারী প্লাষ্টিক কেই পরিণত করবে পেট্রোল জ্বালানীতে। শান্তিনিকেতনে বসবাসকারী এই বিজ্ঞানী গত ১২ বছর ধরে গবেষণা চালিয়ে আসছেন। অবশেষে এমন এক যন্ত্র তিনি বানিয়ে ফেলেছেন যার মাধ্যমে প্লাস্টিক রূপান্তরিত হবে পেট্রোলে। এবং তা জ্বালানী রূপে ব্যাবহার করা যাবে।
পুণ্যব্রত নিজেও একটি তৈল পরিশোধন প্লান্টে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকেই এমন যন্ত্রের রূপরেখা কল্পনা করে আবিষ্কার করেছেন। নিজের তৈরি যন্ত্র থেকে তৈরি হওয়া পেট্রোল দিয়ে নানান যন্ত্র এবং গ্যাস দিয়ে রান্না করে এই বাঙালি বিজ্ঞানী সফলতা পেয়েছেন।
আসলে আমরা যত প্লাস্টিক ব্যবহার করি, সেগুলি সব কটিই প্রায় অপরিশোধিত খনিজ তেল বা প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে রাসায়নিক বিক্রিয়া আর প্রক্রিয়া ঘটিয়ে তৈরি হয়। তাই আবারও তাতে রাসায়নিক অদল বদল ঘটিয়ে জ্বালানি পেট্রল তৈরি করা যায়। কিন্তু তার এই আবিষ্কার ঘিরে সাধারণ মানুষের কৌতুহল, এই যন্ত্রর মাধ্যমে উৎপাদিত জ্বালানির খরচ কত পড়বে? কতোটা জ্বালানীই বা তৈরী করা যাবে?
ড. পুণ্যব্রত চক্রবর্তী জানিয়েছেন কোনো ধুলোবালি মেশা প্লাস্টিক না হলে তার থেকে ৯৫ শতাংশ জ্বালানি উৎপাদন করা যাবে। এই ৯৫ শতাংশের মধ্যে ৪০ শতাংশ হবে গ্যাসের জ্বালানী আর ৫৫ শতাংশ পেট্রোল জ্বালানী। অর্থাৎ কেজি ভাল কোয়ালিটির প্লাস্টিক ব্যাবহার করে ৩৬০ গ্রাম গ্যাস এবং প্রায় ৫৫০-৬০০ মিলিলিটার পেট্রোল উৎপাদিত হয়।
যে কোনো কম ক্ষমতা (Low Compressor) যুক্ত ইঞ্জিনই এই পেট্রোল ব্যবহার করে চালানো যেতে পারে।
বাঙালি গবেষক এই বিস্ময়কর যন্ত্রটি নিজের বাড়িতে বসেই নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর মাধ্যমে তৈরি করে ফেলেছেন। তিনি দীর্ঘ ১০ থেকে ১২ বছরের বেশি সময় ধরে গবেষণা চালানোর পর যন্ত্রটি তৈরি করেন। ২০১৮ সালে এই যন্ত্রের ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইট পাওয়ার জন্য ভারত সরকারের কাছে তিনি আবেদন করেন। অবশেষে ২০২১ সালে তিনি এই যন্ত্রটির ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইট পান।