অটোরিকশা চালক ছিলেন মোহাম্মদ ঘাউস। স্বপ্ন ছিল বড় ক্রিকেটার হবে ছেলে মোহাম্মদ সিরাজ। পূরণও হয়েছে সেই স্বপ্ন । সিরাজের বিষাক্ত ফাস্ট বোলিং এর চর্চা দেশ জুড়ে অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশকে জিতিয়ে ফেরার পর থেকেই। তার বিষাক্ত বোলিং আগুন ঝরিয়েছে সদ্য শেষ হওয়া লর্ডস টেস্টেও। হায়দরাবাদের বাড়িতে উল্লাস জেমস অ্যান্ডারসনের উইকেট ছিটকে যেতেই। তখন দু’হাত ছড়িয়ে ছুটে বেড়াচ্ছিলেন বাড়ির ছেলেটা লর্ডসে টিভির পর্দা জুড়ে। দুই ইনিংস মিলিয়ে ৮ উইকেট প্রথমবার নেমেই। কিংবদন্তি সুনীল গাভাসকরও তাকে দেখে উচ্ছসিত।
সিরাজের দাদা মহম্মদ ইসমাইলের জানান, ‘আমরা কিন্তু জানতাম, সুযোগ পেলেই কামাল করবে সিরাজ।’ ম্যাচের পরেই মা-কে ফোন করেছিলেন সিরাজ লন্ডন থেকে। প্রয়াত বাবার কথাও সেখানে ওঠে। আসলে মহম্মদ সিরাজের বাবা মহম্মদ ঘাউস তাঁর জীবন জুড়ে রয়েছেন। সব সময় অটোচালক ঘাউস দেখতে চাইতেন, তাঁর ছেলে টেস্ট খেলছেন দেশের হয়ে।
কিন্তু খবর পেয়েছিলেন বাবা মারা গিয়েছেন অস্ট্রেলিয়া সফরের মাঝেই। তবে ফিরে আসেননি দেশে। তিনি দেশের হয়ে খেলার সিদ্ধান্ত নেন। সেই সময় সিরাজ বলেছিলেন ‘তাঁর ছেলে দেশের নাম উজ্জ্বল করবে আমার বাবার স্বপ্ন ছিল। আর সেটা করে দেখাবোই আমি।’ কথা রেখেছিলেন সিরাজ। সিডনিতে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি জাতীয় সংগীত শুনে, ব্রিসবেনে পাঁচ উইকেট তুলে নিয়ে প্রয়াত বাবার কথা স্মরণ করেছেন আকাশের দিকে তাকিয়ে।
দাদা ইসমাইল বাবার আচমকা মৃত্যু যে সিরাজের জেদ অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে, তা স্বীকার করলেন। বললেন, ‘সব সময় ও বাবার কথা ভাবে। বাবার কথা বলে। ভাই মনে করে, বাবা নিশ্চয়ই দেখছে ওর সব কাজ। আমাদের বাবা চলে যাওয়ার পর আরও ভালো ভাইয়ের জেদ বেড়ে গিয়েছে কিছু করতে।’
দক্ষিণ ভারতের হায়দরাবাদের অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের বেড়ে ওঠা সিরাজ একসময় খেলাধুলার সরঞ্জাম জোগাড় করতে হিমশিম খেতেন। কিন্তু বাবা মোহাম্মদ ঘাউস সবরকম ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত ছিলেন ছেলের স্বপ্ন পূরণের জন্য। সিরাজও প্রতিদান দিয়েছেন তার বাবার আস্থার। রাজ্য পর্যায় থেকে আইপিএল, জাতীয় দলের জায়গা করে নিয়েছেন সেখান থেকে।
আজ সত্যিই তৃপ্ত মহম্মদ ঘাউস কবরে শুয়েও! তাঁর ছেলে যে মাথা উঁচু করে দিয়েছে গোটা দেশের!