একটা গ্রাম আছে ঠিকই। কিন্তু নেই কোনো লোকের বাস। জলা-জঙ্গল পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে আছে সব পুরনো ঘর বাড়িও। এই গ্রামে আজ আর কেউ থাকেন না। জনমানবহীন হয়ে আছে প্রায় ৪৫ বছর ধরে পড়ে আছে আস্ত একটা গ্রাম। ৬০ বিঘার উপর জায়গা-জমি নিয়ে দাড়িয়ে আছে পিচুলগাড়ি গ্রাম। তবে তার বাসিন্দারা পাড়ি দিয়েছে অন্য গ্রামে। ফেলে গেছে ‘ভাঙা কুটিরের সারি’ সেই গ্রামে।
বাংলাদেশের বগুড়ার সাজাহানপুর উপজেলার গোহাইল ইউনিয়নের পিচুলগাড়ী গ্রামে গেলেই চোখে পড়বে এমন দৃশ্যটি। অথচ গ্রামেই এক সময় এই ছিলো প্রাণবন্ত। চারিদিকে ছিলো সবুজ ফসলের মাঠ। পুকুরে থাকতো মাছ আর গ্রামবাসীদের মনে ছিল আনন্দ। কিন্তু গ্রামটিতে ডাকাত দল হানা দিতে শুরু করে। তারা নগদ টাকা থেকে শুরু করে বাড়িতে যা থাকত তাই লুট করে নিয়ে যেত। বাড়ির মহিলাদেরও অত্যাচার থেকে রেহাই মিলত না। এই কারণে আতঙ্কে সকলেই গ্রাম ছেড়ে চলে যান। জান প্রাণ বাঁচাতে বাপ ঠাকুরদার জায়গা-জমি ছেড়ে আশপাশের নানা গ্রামে মাথা গোজার ঠাঁই করেছেন সকল গ্রামবাসী।
পিচুলগাড়ী গ্রামের বাসিন্দারা জানান, গ্রামের এক মাতব্বর , নান্নু মোল্লার কাছে ডাকাতরা ১৯৭৪ সালে টাকা চেয়েছিল। তাঁকে খুন করা হয় তিনি টাকা দিতে না চাওয়ায়। এমন ভাবে হানা দিতে শুরু করে আরও অনেক বাড়িতেই। এই ঘটনার প্রায় ৮ বছর পর, ভয় আর আতঙ্কে সেখান থেকে অন্যান্য গ্রামে চলে যেতে থাকেন গ্রামের বাসিন্দারা। গ্রামে না থাকলেও এই সব পরিবারের বসতবাড়ি, জমিও সেখানে থেকে গিয়েছে।
অনেকেই বর্তমান প্রজন্মের,ফিরতে চান বাপ-ঠাকুর্দার গ্রামেই। কিন্তু বগুড়া থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কোনও যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই, এই গ্রামে এমনকি আলোও নেই । সেখানে এখন যাওয়ার রাস্তা । গ্রামে রাস্তা, আলো হলে, আর নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হলে ফিরে আসবেন বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
এই গ্রামটিতে একসময় ১৬টি বাড়িতে বসবাসকারীদের অনেকেই এখনও বেঁচে আছেন। অন্যগ্রামে স্থায়ীভাবে বাস করতে শুরু করেছেন বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই। তবু স্মৃতিচারণ করতে প্রতি শুক্রবার গ্রামের একমাত্র মসজিদে জুমার নামাজ পড়ে সবাই।
হাদিসুর নামের যুবক বলেন, ‘গ্রাম লাগোয় জঙ্গলে আমাদের জমি আছে। সেখানে একটি মুরগির খামার করেছি। সারাদিন সেখানেই থাকি। কখনও রাতেও থাকি।
তবে রাতে শেয়াল সহ নানা ধরনের পশুপাখির ডাকে ভয়ও লাগে। তবে যদি গ্রামে রাস্তা, আলোর ব্যবস্থা হয় তাহলে গ্রামের বাড়িতে থাকতে কোনও অসুবিধা হবে না।’
গ্রামের মসজিদের ইমাম বলেন, ‘আমাদের ইচ্ছা হয় আবার এই গ্রামে ফিরতে। রাস্তা ও আলোর ব্যবস্থা হলে ফিরব।’
স্থানীয় সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলু বলেন, ‘এই গ্রামের বিষয়টি জানি। এখন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা লিখিতভাবে আবেদন করলে পেচুলগাড়ী থেকে পার্শ্ববর্তী গ্রামের সঙ্গে সংযোগ রাস্তা করা এবং অন্যান্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে। গ্রামবাসীরা ফিরতে চাইলে নিরাপত্তার পাশাপাশি সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হবে।’