পৃথিবী নাকি ক্রমশই এগিয়ে যাচ্ছে ধ্বংসের দিকে। বর্তমান সময়ে বাড়তে থাকা প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা বিস্ফোরণ হিংসার ঘটানোর প্রবণতা নাকি সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে। যদি এমন সময় আসে যেখানে মানব সভ্যতাই পরে বিপদের মুখে। তখন?
এমন চিন্তা সবসময় ঘুরপাক খায় ব্রুস বিচের মাথায়। ব্রুসের দৃঢ় বিশ্বাস সেই দিন আসতে বেশি দেরি নেই যেদিন মানব সভ্যতা পড়বে ধ্বংসের মুখে। খুব তাড়াতাড়িই নাকি বাঁধবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ।
তাই চিন্তিত ব্রুস মানব সভ্যতা কে বাঁচাতে পারমাণবিক বোমার আঘাতও সহ্য করতে পারবে এমন একটি আশ্রয়স্থল বানিয়ে ফেলেছেন এর মধ্যেই। এখানে রয়েছে ৫০০ লোকের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।
ব্রুস বিচের জন্ম ১৯৩৪ সালে আমেরিকার কানসাসে। জীবনের অনেকটা সময়ই কেটেছে তার ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময়ে। তাই বোধহয় ব্রুসের মনে আশঙ্কা রয়েছে আসন্ন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে।
সেই তখন থেকেই পৃথিবীতে মানুষের প্রজাতি যাতে কিছুটা হলেও বেচে থাকতে পারে তার জন্য খোঁজ শুরু করেন সেফ হাউসের। কানাডায় চলে আসে ব্রুস। শুরু হয় মাটির নিচে আস্তানা বানানোর চিন্তা।
সেফ হাউসের ব্লু প্রিন্ট বানিয়ে স্ত্রীর জন্মস্থান হর্নিং মিলস-এ চলে গেলেন। ১৯৮০ সাল থেকে ব্রুস কাজ শুরু করে দিলেন নিরাপদ আস্তানা বানানোর।
সেই পরিকল্পনা মতন পুরনো স্কুল বাস কিনতে শুরু করলেন। এক একটির দাম পড়েছিল ৩০০ ডলারের।
মোট ৪২টি স্কুল বাস এই ভাবে কেনেন তিনি। এটা ছিল প্রথম ধাপ তাঁর সেফ হাউস পরিকল্পনার। ১৯৮৫ সালে দ্বিতীয় ধাপ শুরু করেন তিনি। তিনি পারমাণবিক বিস্ফোরণ থেকে বাঁচার আস্তানা হিসাবে এই স্কুল বাসগুলিকেই তৈরি করে ফেললেন। ব্রুস স্কুল বাসের ছাদে কংক্রিট দিয়ে কাঠামো তৈরি করেছেন। তার উপর ঢাকা দিয়েছেন মাটি দিয়ে। ওই সব স্কুল বাস এই বিপুল ভার বহন করার ক্ষমতা রাখে।
অনেকটা নীচ থেকে বাসের কাঠামোগুলিকে পর পর সাজিয়ে ওই আস্তানা তৈরির কাজ শুরু হয় ১২.৫ একর জমিতে মাটি খুঁড়ে। বাসের মাথায় ছাদ দেওয়া হয় কংক্রিটের। তার উপর চাপা দেওয়া হয় মাটি। ফলে কারও পক্ষে বাইরে থেকে আস্তানার সন্ধান পাওয়া সম্ভব নয়। শুধু একটিমাত্র দরজা বাইরে দেখতে পাওয়া যায়।
অন্তত ৫০০ জন এই ভূগর্ভস্থ আস্তানায় থাকতে পারবেন। তাঁদের জন্য ব্যবস্থাও রয়েছে জল, অক্সিজেন, খাবার, বিদ্যুতের। সঙ্গে রেডিয়ো সেন্টারও রয়েছে কঠিন সময়ে এখানে থাকা মানুষগুলো কী অবস্থায় রয়েছেন এবং বাইরের পরিস্থিতিই বা কী রকম তা জানার জন্য। যার মাধ্যমে তাঁরা কানাডা এবং আমেরিকার রে়ডিয়ো সেন্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন।
এই আস্তানায় পৃথিবীর যে কোনও প্রান্ত থেকে যে কেউ থাকতে পারেন। সমস্ত মানুষকেই জাতি, ধর্ম, বর্ণ, রাজনীতি সব কিছুর ঊর্ধ্বে উঠে এই আস্তানায় স্বাগত জানিয়েছেন ব্রুস। তিনি এর জন্য টাকাও নেবেন না।