আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় এক খনিজ উপাদান জিংক। জিংকের বিশাল ভূমিকা রয়েছে শারীরবৃত্তীয় অনেক কার্যক্রম পরিচালনায়। এটি জোরদার করে রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা। নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে যদি শরীরে জিংকের ঘাটতি তৈরি হয়। এটি সাহায্য করে শরীরের ক্ষত নিরাময়েও। জিংকের বিশেষ ভূমিকা শিশুর শারীরিক বৃদ্ধিতেও রয়েছে। এ ছাড়া এটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে শরীরের জন্য ক্ষতিকর মুক্ত মৌলের বিরুদ্ধে লড়াই করে। ফলে ক্যানসারের ঝুঁকি কমে। শরীরে জিংক প্রায় ৩০০ ধরনের উৎসেচকের কাজের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান। এসব উৎসেচক অনেক কাজ সম্পন্ন করে তার মধ্যে শরীরের বিপাক, হজম, স্নায়বিক কার্যক্রমসহ অসংখ্য কার্য সম্পাদন করে। জিংক দরকারি একটি উপাদান আমাদের স্বাদ ও ঘ্রাণের অনুভূতির জন্যও।
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে খাবারে পরিমাণ মতো দস্তা বা জিঙ্ক (zinc) খনিজ পদার্থটি থাকলে। এতদিন কেউ বিশেষ মাথা ঘামাতেন না এসব নিয়ে। কিন্তু যেদিন থেকে মহামারির হামলা শুরু হয়েছে এবং জানা গেছে সে এই রোগের কোনও ওষুধ নেই, সেদিন থেকেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির দিকটি আলোকপাত শুরু করেছেন চিকিৎসকরা।
জিঙ্ক ট্যাবলেট কিনতে সাধারন মানুষও দোকানে ছুটেছে। শরীরে ভিটামিন, মিনারেল কিংবা প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ করা যায় বটে ওষুধ খেয়ে। তবে যদি সেই ঘাটতির অনেকটা পূরণ হয় রোজকার খাবার খেয়েই তাহলে তো আরও ভালো।
খাদ্য তালিকায় রাখুন ডিম, মাছ এবং মাংস শরীরে জিঙ্কের সরবরাহ বজায় রাখতে। সপ্তাহে অন্তত দুই দিন মাছ খেতে হবে ডায়েটিশিয়ানদের মতে। তবে এটা নিয়ে বিশেষ চিন্তা করতে হয় না বাঙালি পরিবারে। দুপুর-রাতের খাবার অসম্পূর্ণ মাছ ছাড়া। এমনকি বাঙালির খাদ্যজীবন ভাবা ডিম এবং মাংস ছাড়াও একটু কঠিন।
উপায় আছে নিরামিশাষিদেরও। তবে সত্যি কথা বলতে যতটা ঘাটতি পূরণ হয় মাছ মাংস ডিমে খেলে সবজি, ফল কিংবা দানা শস্যে তা হয় না। এক্ষেত্রে শরীরের জিঙ্কের ঘাটতি পূরণ হয় আমিশ খাবার অল্প খেলেই। কিন্তু নিরামিশ খাবার অনেকটাই খেতে হয়।
তা বলে হতাশ হওয়ার মতো ব্যাপার নয়। প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় নিরামিশাষিরা রাখুন আটার রুটি, বিনস্, ছোলা, দানা শস্য, স্প্রাউট।
খাদ্য তালিকায় আমন্ড, আখরোট, কাজু, সূর্যমুখী, কুমড়ো বা তরমুজের বীজ রাখতে হবে।
ফল বা সবজি থেকে খুব একটা উপকার না পেলেও পাতে ব্রোকোলি, পালংশাক, মাশরুম, অ্যাভোকাডো, বেদানা বা পেয়ারা। এগুলিতে জিঙ্ক অল্প পরিমাণ থাকে।
দেশে যথেষ্ট অভাব রয়েছে করোনা প্রতিষেধকের। তাই যতদিন না প্রতিষেধক পাচ্ছেন ততদিন পুষ্টিকর খাবার খেয়েই রোগের সঙ্গে মোকাবিলা করুন। কিন্তু পুষ্টিকর খাবার খাওয়া ছাড়বেন না প্রতিষেধক পাওয়ার পরও। কারণ পুষ্টির চাহিদা শরীরে কখনও কমে না। চাহিদা পূরণ হলেও পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস চালিয়ে যেতে হবে ভারসাম্য রক্ষার জন্যও।