কথা দেওয়াটা যতটা সহজ কথা রাখাটা তেমন সহজ নয়। কথা অনেক মানুষ দিয়ে থাকেন কিন্তু সে কথা রাখতে তারা পারেন না। কিন্তু এমন অনেকেই আছেন যারা কথা রাখতে নিজের প্রাণ বিসর্জন পর্যন্ত করতে পারে। এমনই একজনের কথা এখানে বলা হচ্ছে, যার বোন আর নেই কিন্তু বোনের কাছে দেওয়া কথা তিনি রেখে চলেছেন।
জয়দেব বিশ্বাসের বাড়ি অশোকনগর কুচুয়া মোড় লাগোয়া রবিতীর্থ এলাকায়। জয়দেববাবু ইলেকট্রিক সাপ্লাইতে কর্মরত ছিলেন। চাকরি জীবন থেকে কয়েক বছর আগে অবসর নিয়েছেন । প্রতিবেশী এক বোনের কাছ থেকে ১৯৯৬ সালে ভাই ফোঁটা নেন জয়দেববাবু। অধ্যাপক অগ্নিবীণা দেবের কাছ থেকে আর পাঁচ জনের মতোই ভাইফোঁটা নেন জয়দেববাবু। সেবার জলপাইয়ের চাটনি ছিল মধ্যাহ্নভোজের শেষপাতে। বোন চাটনির স্বাদ নেবার মুহূর্তে জানতে চায়, কতদিন জলপাইয়ের বীজটা মুখের ভেতরেই রাখতে পারবে ভাই? বোনের কথায় দাদা বলে, তুই যতদিন ফেলতে না বলবি।
এইভাবে প্রায় ২৩ বছর পেরিয়ে যায়। সেই বীজ মুখের ভেতর রেখে দেন দাদা জয়দেববাবু। সকাল থেকে রাত সারাদিন ধরেই আজও মুখে রয়ে গিয়েছে সেই বীজ। সব কিছু করেন জয়দেববাবু আজ বোনের স্মৃতির জলপাই আঠি নিয়ে। মুখে থাকে বীজ খাওয়া, ঘুমোনো, পুজো, দাঁত মাজা সবেতেই। দীর্ঘ সময় এই ভাবেই চলতে থাকে। হঠাৎ আসে সেই খবর ২০১২ সালের ২৪ জানুয়ারি। দাদা খোঁজ পান যে বোনের মৃত্যু হয়েছে। দাদা বোনের আকস্মিক মৃত্যু সংবাদে ভেঙে পড়েন। বোনের দেওয়া সেই জলপাই বীজ এখনো মুখে নিয়ে ঘুরে বেড়ান তার দাদা। জয়দেববাবু ভালো মতই জানেন ,বোন আর ফিরবে না। তবু কথা রেখে চলেছেন বোনের।
জয়দেববাবুর এই স্মৃতিধারণকে কেউ কেউ বোকামো বললেও তাঁর বন্ধুরা তাকে কুর্নিশ জানিয়েছেন। তারাও একই কথা বলছে, কেউ তো কথা রাখলো।