আজ আমরা আপনাদের এই প্রতিবেদনে এমন এক অসহায় ও পরিশ্রমী বাবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে চলেছি যিনি তার দুধের শিশু ছেলেকে এক হাতে আর কাঁধে এবং অন্য হাতে সাইকেল রিক্সার হাতল ধরে রিকশা চালিয়ে নিজের অন্ন সংস্থান করছেন। আসলে, রাজেশ মালদার নামক ওই ব্যাক্তি বিহারের কাথিয়ার জেলার বাসিন্দা। রাজেশ নামের এই অসহায় বাবা প্রতিদিন বাড়ি থেকে বের হয়, সেই সময় তার একরত্তি শিশুপুত্রও তার সাথে থাকে। তাকে নিয়ে রাজেশ শহরের চারপাশে ঘুরে বেড়ায় ভাড়ার খোঁজে। কোনো সওয়ারি পেলে এক হাতে রিকশা চালিয়ে তাদের গন্তব্যে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পেট ও সংসার চালানোর বাধ্যবাধকতা একজন মানুষকে কী করতে বাধ্য করে, রাজেশ তার জীবন্ত উদাহরণ।
রাজ্য থেকে কেন্দ্র সরকার পর্যন্ত গরীব মানুষের জন্য প্রদত্ত স্কিম এমন অসহায় মানুষের কাছে এসে যেন থমকে যায়। সরকারের দাবির বিপরীতে রাজেশের মতন মানুষের বাধ্যবাধকতাই যেন যথেষ্ট যে সরকারি প্রকল্পের সুবিধা কেউ পেলেও অভাবীরা এখনও তা পাচ্ছেন না।
বিহার থেকে জবলপুর এসেছিল ১০ বছর আগে:
রাজেশ জানান, ১০ বছর আগে তিনি বিহারের কাটিহার জেলা থেকে জবলপুরে এসেছিলেন কাজের সন্ধানে। সেওনি জেলার কানহারওয়াদা গ্রামের এক মেয়ের সঙ্গে প্রেম করে বিয়ে হয় তার। রাজেশ ও তার স্ত্রী দুজনেই ফুটপাথের পাশে দুই সন্তানকে নিয়ে বসবাস করছিলেন, কিন্তু ভাগ্যের খেলা এমন যে দুই সন্তানের জননী অন্য প্রেমিকের সাথে পালিয়ে যায়। প্রথমে রাজেশ তার স্ত্রীকে এখানে-সেখানে খোঁজার অনেক চেষ্টা করে, কিন্তু স্ত্রীকে কোথাও খুঁজে পায়নি। এরপর দুই সন্তানের দায়িত্ব পড়ে রাজেশের কাঁধে। রাজেশ এখন রিকশা চালিয়ে বাচ্চাদের দেখাশোনা করছেন দুই সন্তানকে মানুষ করার জন্য। শুধু তাই নয়, রাজেশের শাশুড়ি তার দ্বিতীয় সন্তানকে বাসস্টপে রেখে দেখাশোনা করেন।
যে কেউ রাজেশের দিকে তাকায় সে দেখে, তার ছোট্ট ছেলেকে তার কাঁধে ফেলে এক হাতে সাইকেল রিকশা চালাচ্ছে। তখন সকলে রাজেশের কঠোর পরিশ্রম এবং জীবনীশক্তির প্রশংসা করা থেকে নিজেদের আটকাতে পারে না। একই সঙ্গে মানুষ সরকারকেও প্রশ্ন করে এমন মানুষের জন্য কি কিছু করা যায় না?