মডেলিং করতেন টুকটাক। কয়েকটি সিনেমার পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয়। আর কলকাতায় নেল আর্টের সালো। সেখান থেকে কি এত টাকা ইনকাম করা যায়?
শুক্রবার সন্ধ্যাবেলা সারারাজ্যে তোলপাড় পড়ে যায় যখন রাতারাতি সামনে আসে অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের নাম। টালিগঞ্জের কাছে হরিদেবপুরের ডায়মন্ড সিটি সাউথে তার আবাসনের খাটের ভেতর ও আলমারি থেকে মেলে নগদ ২০ কোটি টাকা। এছাড়াও ইডির হাতে আসে ২০ টি আইফোন, মূল্যবান সোনার গয়না ও বৈদেশিক মুদ্রাও।
কিন্তু কে এই অর্পিতা? শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় তদন্ত করতে নেমে অর্পিতা অব্দি কিভাবে পৌঁছলেন তদন্তকারীরা। এমনকি ওই মহিলার বাড়িতে এতগুলো টাকা এলো সেটাই বড় প্রশ্ন সকলের কাছে। সময় যত এগিয়েছে ততই জটিল হয়েছে এই ধাঁধা। কেননা বেলঘড়িয়ায় নিতান্ত সাধারণভাবে থাকা অর্পিতার পরিবারকে দেখে এই প্রশ্ন সকলের মনে।
অর্পিতার পুরনো বাড়ী বেলঘরিয়ার দেওয়ানপাড়ায়। দৈন্যতার ছাপ নজরে পড়া এই বাড়িতে অর্পিতার মা মিনতি মুখোপাধ্যায় একাই বাস করেন। অর্পিতা একটি মিশনারি স্কুল থেকে নিজের স্কুলের পড়াশোনা শেষ করেছিলেন। এরপর ভর্তি হন মধ্য কলকাতার কলেজে। স্নাতক পাশ করেই যোগ দেন মডেলিংয়ে। সেখান থেকেই অভিনয়ে হাতেখড়ি। বেশ কিছু ওড়িয়া, তামিল সিনেমায় অভিনয় করেছেন অর্পিতা। বেশ অনেকদিন আগে বাংলার দুটি সিনেমায় (‘পার্টনার’ এবং ‘মামা-ভাগ্নে’) পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। তারপর থেকে সেভাবে বাংলা সিনেমায় অভিনয়ের সুযোগ না পেলেও টুকটাক মডেলিং সিরিয়ালে কাজ চলত। আর কলকাতায় নেল আর্টের সালো।
জানা গিয়েছে, এই অর্পিতা মুখোপাধ্যায় বেহালার অন্যতম নামকরা পুজোর সংস্থা নাকতলা উদয়ন সংঘের পুজোর সাথে যুক্ত ছিলেন। অভিনয় এবং মডেলিংয়ের সূত্র ধরেই বেশ কিছু বছর ধরেই নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে ওঠে তাঁর। প্রসঙ্গত নাকতলা উদয়ন সংঘের পুজো আবার তৃণমূলের হেভিওয়েট নেতা এবং রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষা মন্ত্রী ‘পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পুজো’ হিসেবেই পরিচিত। এই পুজোর চেয়ারম্যানও পার্থ। প্রতি বছরই প্রচুর টাকা ব্যয়ে এই দুর্গাপুজো হয়। এই পুজোর সূত্র ধরেই অর্পিতার সাথে পার্থ চ্যাটার্জীর পরিচয় বলে বেশ কিছু সংবাদ মাধ্যমে জানাচ্ছে। পুজোর উদ্বোধন হোক কি ভোটের প্রচার, দু’জনকে বহু সময়ে একসঙ্গে দেখা যেত। এর থেকেই কি উত্থান অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের? তার অঢেল সম্পত্তি, গয়না এবং ফ্ল্যাট থেকে মেলা কারি কারি টাকা হয়তো কিছুটা সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে। যে তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড পার্থ চ্যাটার্জি সাথে পরিচয় আর এই বিপুল সম্পত্তির মধ্যে যোগ সাজিশ রয়েছে। তদন্ত এখন কি বলে সেটাই দেখার।