রাজ্যে দিন প্রতিদিন দৈনিক সংক্রমন লাগাম ছাড়া। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা।
রবিবারের স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুসারে রাজ্যে আবারও করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা একদিনে দেড়শোর গণ্ডি পার করলো। রাজ্যে এক দিনে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ১৫৬ জনের। উত্তর ২৪ পরগনা ও কলকাতায় মৃত্যু হয়েছে ৪৬ জন করে। মুর্শিদাবাদে মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের। এই নিয়ে রাজ্যে করোনায় মৃত্যু বেড়ে দাড়ালো ১৪,৩৬৪।
এছাড়াও রাজ্যে একদিনে ফের করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৮ হাজার ৪২২ জন। এ নিয়ে রাজ্যে মোট করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ১২,৪৮,৬৬৮ জনে। রাজ্যে এই মুহূর্তে করোনার মোট অ্যাক্টিভ রোগী রয়েছেন ১,৩০,৫২৫ জন।
রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপের পথে যাচ্ছে। রাজ্যের একাধিক হাসপাতালে অক্সিজেন, বেডের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। উপরন্তু করোনায় জীবনদায়ী ওষুধ রেমডেসিভিরও অমিল। কিছু দিন আগেই চড়া দামে কালোবাজারি চলছিল রেমডেসিভিরেরও। অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নেমে পুলিশ কয়েক জন কে গ্রেফতারও করে।
ফলস্বরূপ জীবনদায়ী এই ওষুধ খুঁজতে নাজেহাল হচ্ছেন রাজ্যের মানুষ। এমন অবস্থায় রাজ্য সরকারের তরফ থেকে একটি ওয়েবসাইট চালু করা হয় খালি হাসপাতাল বেডের সংখ্যা দেখিয়ে। কিন্তু সেই ওয়েবসাইটের তথ্য সামলাতেও ব্যর্থ রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রশাসন।
দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা যেখানে সেই ভাবে কমছে না, এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য দফতরের ওয়েবসাইটে খোঁজ নিয়ে দেখা যাচ্ছে, হাসপাতালে বেড খালি রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে বেড পাচ্ছেন না রোগীরা। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে করোনা রোগী হাসপাতাল অবধি পৌঁছলেও বেড না-পেয়েই ফিরতে হচ্ছে বহু রোগী কে। এমন রোগী হয়রানির চিত্র রাজ্যের সর্বত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোনো মতে অক্সিজেন সিলিন্ডার জোগাড় করে বাড়িতেই অক্সিজেন সাপোর্টে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে বহু আক্রান্ত।
ইতিমধ্যেই রাজ্যে এসে পৌঁছেছে টিকার বহু ডোজ। জেলায় জেলায় সেই টিকার জন্য দীর্ঘ লাইনও পড়ছে। এমনকী টিকার লাইনের টোকেন চড়া দামে বিক্রির অভিযোগও উঠেছে জলপাইগুড়িতে। টিকার লাইনে হাতাহাতির ছবি দেখা গিয়েছে বারাসতেও। তবে মনে করা হচ্ছে টিকার যোগান ঠিকঠাক থাকলে আস্তে আস্তে মানুষের হয়রানি কমানো সম্ভব হবে।
রাজ্যে করোনা সংক্রমণের দিক থেকে সবচেয়ে উপরে রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা। গত ১ দিনে এই জেলায় ৩৭৭১ জন করোনা রোগী রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। এর পরেই শীর্ষে রয়েছে কলকাতা। ২৪, ঘণ্টায় কলকাতায় আক্রান্ত ৩০৫৬ জন। এরপর রয়েছে হাওড়া, নদিয়া, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, পশ্চিম মেদিনীপুরের ইত্যাদি জেলার নাম। দুই বর্ধমানেরও পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। বীরভূমেও বাড়ছে করোনার প্রকোপ। বিশেষজ্ঞ চিকিৎকদের মতে, রাজ্যে এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে, বিশেষ করে কোভিডে মৃতের সংখ্যা না কমাতে পারলে কার্যত লকডাউন বাড়ানো ছাড়া রাজ্য প্রশাসনের কাছে আর কোনো উপায় থাকবে না।
আপাতত ৩০ মে পর্যন্ত কার্যত লকডাউন চলছে গোটা পশ্চিমবঙ্গে। কিন্তু তাতেও আক্রান্ত বা মৃতের নিরিখে বিশেষ হেরফের না হওয়া চিন্তায় রাখবে রাজ্য প্রশাসন কে।