দিল্লির অভিজাত এলাকা বসন্ত বিহারে শনিবার রাতে একই পরিবারের ৩ সদস্য আত্মহত্যা করেছেন। মা এবং দুই মেয়ে ফ্ল্যাটটি চারদিক থেকে বন্ধ করে দিয়ে এবং কিছু রাসায়নিক পদার্থ নিয়ে তাতে আগুন যোগ করে বিষাক্ত ধোয়ার সৃষ্টি করে। যার কারণে গোটা ঘর গ্যাস চেম্বারে পরিণত হয়। প্রাথমিক তদন্তে তিনজনেরই শ্বাসরোধে মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। এক বছর আগে করোনায় পরিবারের গৃহকর্তার মৃত্যু হয়েছিল, তারপর থেকে পুরো পরিবার হতাশায় ভুগছিল বলে সূত্রে খবর।
পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পেরেছে, এই ফ্ল্যাটে থাকতেন বয়স্কা মহিলা অঞ্জু তার দুই মেয়ে আশিকা ও অঙ্কু। দুই মেয়ের বয়স ৩০ বছরের আশেপাশে। অসুস্থতার কারণে বিছানা থেকে উঠতেও পারছিলেন না মহিলা। একই সঙ্গে গত বছর করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ওই নারীর স্বামীও মারা যান। এ কারণে পুরো পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে পড়ে। তাই ধীরে ধীরে ডিপ্রেশনে চলে যান মা-মেয়েরা।
কর্পোরেশনের কাউন্সিলর ও প্রতিবেশী মনীশ আগরওয়াল জানান, বসন্ত অ্যাপার্টমেন্টের নিচতলায় মৃত পরিবারের নামে দুটি ফ্ল্যাট ছিল। পরিবারের তিন সদস্যই ২০৭ নম্বর ফ্ল্যাটে একসঙ্গে থাকতেন। দ্বিতীয় ফ্ল্যাটটি ভাড়ায় দিলেও কয়েক মাস আগে খালি হয়ে যায়। এই পরিবারের গৃহকর্তা ছিলেন একজন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট (CA)। তার মৃত্যুর পর পরিবারের অবস্থার অবনতি হতে থাকে।
ওই ফ্ল্যাটে আগে কাজ করা এক মহিলা জানান, টাকার অভাবে বয়স্ক মহিলা অঞ্জু খুবই বিরক্ত ছিলেন। টাকা চাইতে এই গৃহকর্মী সকাল থেকে কয়েকবার তাদের বাড়িতে গেলেও কেউ দরজা খোলেনি। এমনকি কেউ ফোনও ধরছিল না। অবশেষে সেই মহিলা বিষয়টি স্থানীয় লোকজনকে জানান। এরপর আশেপাশের লোকজন জানালা দিয়ে ফ্ল্যাটের ভেতরে উঁকি দেওয়ার চেষ্টা করলে ভেতরে বিষাক্ত গ্যাসের উপস্থিত টের পায়। বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে জানানো হয়।
ডিসিপি সাউথ ওয়েস্ট বলেন, শনিবার রাত ৮টা ৫৫ মিনিটে পুলিশ খবর পায় যে বসন্ত বিহারে অবস্থিত বসন্ত অ্যাপার্টমেন্টের 207 নম্বর ফ্ল্যাটটি ভিতর থেকে তালাবদ্ধ এবং ডোরবেল বাজানোর পরেও কেউ ভিতর থেকে দরজা খুলছে না। এর পরেই এসএইচও বসন্ত বিহার তাঁর দল নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান।
পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে দেখে ফ্ল্যাটের দরজা-জানালা চারদিক থেকে বন্ধ ছিল। ঘটনার খবর পেয়ে লোকজন ভিড় জমায়। স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে দেখা যায় পুরো ঘর ধোঁয়ায় ভরে গেছে। একই সময়ে তিনটি স্থানে আগুন জ্বলছিল এবং পুরো পরিবারের মৃতদেহ অর্থাৎ মা ও দুই মেয়ের লাশ ঘরে পড়ে ছিল। একইসঙ্গে এইভাবে সকলে মিলে আত্মহত্যা করার আগে দেয়ালে একটি চিরকুট সাঁটিয়ে দিয়েছিল, ‘ঘরে প্রবেশের পর কোনো ধরনের লাইটার বা আগুন জ্বালাবেন না।’ মা ও মেয়েরা মৃত্যুর আগে এই নোটগুলো রেখে গেছেন।
এর উদ্দেশ্য ছিল রুমে গ্যাসের কারণে যেন কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে এবং অন্য কেউ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। অর্থাৎ তারা নিজেরাই নিজেদের জীবন শেষ করতে চেয়েছিল, কিন্তু তাদের কারণে অন্য কেউ যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সে জন্যও চিন্তিত ছিল। ঘরের ভেতরের গ্যাস সিলিন্ডারও খোলা ছিল বলে সন্দেহ পুলিশের। বর্তমানে তিনটি লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে এবং বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।