আগেই মারা গিয়েছিল এক ছেলে। তার আগেও মারা গিয়েছেন স্বামী। সবাইকে হারিয়ে বড় ছেলে কে নিয়ে বাস করতেন বৃদ্ধা। শোকসন্তপ্ত বৃদ্ধা ছেলের মৃত্যুর আঘাতে আগেই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ছিলেন। এবারে বড় ছেলে মারা গেলেও সে বিশ্বাস করতে নারাজ। মর্মান্তিক এই ঘটনায় মহেশতলার। মহেশতলার বৃদ্ধা বকুল সেনগুপ্তর বড় ছেলে মারা গেলে কাউকে না জানিয়েই মৃতদেহ আগলে বসেছিলেন তিনি। বিশ্বাসই করছিলেন না যে ছেলে বেঁচে নেই। মৃত ছেলেকে গ্লুকোজ মেশানো জল খাওয়ানোর চেষ্টা করছিলেন তিনি। অবশেষে প্রতিবেশীদের উদ্যোগেই প্রকাশ্যে আসে ঘটনা। খবর পৌঁছয় প্রশাসনের কাছে।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, মহেশতলার চককেন্দুয়ায় একটি ভাড়াবাড়িতে বাস করতেন বয়স্কা বকুল সেনগুপ্ত। স্বামীর মারা যাওয়ার পর আয়কর বিভাগে চাকরিও করতেন। কিন্তু ছোট ছেলের মৃত্যুর শোক তাঁকে নাড়িয়ে দেয়। কিছুটা অসংলগ্ন হয়ে পড়েন বকুল দেবী। বড় ছেলের সাথেই বাস করতেন তিনি। বড় ছেলের নাম কৌশিক, বয়স ৩৯ বছর।
প্রতিবেশীরা জানান কৌশিক নেশায় ডুবে থাকতো। অস্বাভাবিক জীবনযাপন করতো। স্বাভাবিক মানুষের মত কোনো ভোটার কার্ড বা আধার কার্ড সে বানায় নি। নথির অভাবে হাসপাতালে ভর্তি করে তাকে চিকিৎসা করা যেত না। সেইজন্য অসুস্থ অবস্থায় তার চিকিৎসা করা যায়নি। প্রতিবেশী সূত্রে খবর গত বেশ কিছুদিন দেখা যাচ্ছিলোনা কৌশিক কে। তার কি হয়েছে জানতে রবিবার রাত সাড়ে দশটা নাগাদ পাড়ার কয়েকজন যুবক তার বাড়িতে যান। ঘরে ঢুকে চোখে পড়ে মেঝেতে শুয়ে রয়েছে কৌশিক। তাকে গ্লুকোজ খাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন বকুল দেবী। জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন যে তার ছেলে গ্লুকোজ খেয়ে ঘুমচ্ছে।
বিষয়টি দেখামাত্র চাঞ্চল্য ছড়ায়। স্থানীয়রা ওয়ার্ডের পুরপিতা মুকুল মণ্ডলকে পুরো বিষয় সম্পর্কে অবহিত করেন। তিনি একজন চিকিৎসা আনানোর ব্যবস্থা করেন। চিকিৎসক এসে পরীক্ষা করে জানান কৌশিক মারা গিয়েছেন এবং সম্ভবত একদিন আগেই মারা গিয়েছেন তিনি। তারপর পাড়ার লোকেদের উদ্যোগে তার মৃতদেহ উদ্ধার করে আকরা শ্মশানে সম্পন্ন করা হয় তাঁর শেষকৃত্য। যদিও ছেলের মৃত্যুর কথা মানতে নারাজ তার মা। তার দৃঢ় বিশ্বাস ছেলের চিকিৎসা করাতে প্রতিবেশীরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছে। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে যাওয়ার কারণেই অবশ্য তিনি এমনটা বলছেন। ছোট ছেলে মারা যাবার পর থেকে ১০ বছর অসংলগ্ন কথাবার্তা বলেন তিনি। এমনকি ছোট ছেলের মারা যাওয়ার কথাও স্বীকার করেন না তিনি।