“হ্যাঁ, রাজমিস্ত্রি আমরা। কী তাতে? আমাদের কি মন থাকতে নেই রাজমিস্ত্রি বলে?” এক নিঃশ্বাসে এই কথাগুলো বলেন বালির নিশ্চিন্দা এলাকা থেকে দুই গৃহবধূ নিখোঁজ কাণ্ডে অভিযুক্ত দুই রাজমিস্ত্রি শুভজিৎ দাস এবং চন্দ্রশেখর মজুমদার হাওড়া জেলা আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে। তাঁদের বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগ করা হয়েছিল ওই দুই গৃহবধূর পরিবারের তরফে। তবে বর্তমানে তাঁরা জামিনে মুক্ত আদালতের নির্দেশে। তাঁরা হাওড়া জেলা আদালতে এসেছিলেন বৃহস্পতিবার। সেখানেই তাদের প্রেমিকা অনন্য়া ও রিয়ার প্রতি মনের কথা ব্যক্ত করেন তাঁরা।
তাঁরা জানান, দুই গৃহবধূকে ভুল বুঝিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়নি। বরং মন থেকে ভালবাসেন তাঁদের। সংসার পাততে চান তাঁদের সঙ্গেই। রাজমিস্ত্রি শুভজিৎ এবং চন্দ্রশেখরের প্রশ্ন, ” আমরা কি মানুষ নই রাজমিস্ত্রি বলে? আমাদের মন কি নেই না কি ভালবাসতে নেই আমাদের?” তারকনাথ বাগানি এক অভিযুক্তের আইনজীবী জানান, অপহরণের মামলা হলেও, পুলিস কিছু দেখাতে পারেনি ফাইনাল রিপোর্টে। তাই জামিন মিলেছে। একই বক্তব্য অপর আইনজীবী শীর্ষেন্দু চট্টোপাধ্য়ায়েরও। তিনি জানান, কাউকে ভালবাসতেই পারে কেউ নিজের ইচ্ছেয়। কোনও দোষ নেই এতে। তবে মেয়েগুলো যেহেতু বিবাহিত তাই আইনি জটিলতা রয়েছে। তাঁরা বিয়ে করতে পারেন বিবাহবিচ্ছেদের পর।
শ্রীরামপুরে শীতের পোষাক কেনাকাটার করার জন্য ১৫ ডিসেম্বর বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন কর্মকার পরিবারের ২ বউ। বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন বড় বউ অনন্যা কর্মকার ৭ বছরের নাতিকে সঙ্গে নিয়েই ও সাথে ছিলেন ছোট বউ রিয়া কর্মকার। তারপর তাদের আর কোনও খোঁজ পায়নি পরিবার সেদিন বিকাল থেকেই। মোবাইল সুইচড অফ একদিকে। অন্যদিকে, কোনও হদিশ মেলেনি বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিতের বাড়ি গিয়েও।
অপহরণের মামলা শুরু করে পুলিশ পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে। বেশ কয়েক দিন নিখোঁজ থাকার পর বাড়িতে কাজ করতে আসা দুই রাজমিস্ত্রির সঙ্গে বাড়ি ছেড়ে মুম্বইয়ে পাড়ি দিয়েছেন কর্মকার পরিবারের ওই দুই বধূ পুলিশ জানতে পারে। এরপর আসানসোল থেকে শুভজিত ও চন্দ্রশেখরকে গ্রেফতার করা হয় মুম্বই থেকে ফেরার সময়। পুলিশ ছেড়ে দিলেও রিয়া এবং অনন্যাকে তাঁদের আর ‘ঠাঁই’ হয়নি নিজেদের শ্বশুরবাড়িতে। তাঁরা শেষমেশ বাপেরবাড়িতে ওঠেন। আর শুভজিৎ ও চন্দ্রশেখর দুই রাজমিস্ত্রি এই দিন জেল থেকে মুক্তি পেয়ে সংসার করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তাদের ভালোবাসা রিয়া ও অনন্যার সঙ্গেই আইনি জটিলতা কাটিয়ে।