সকালে ঘরে ঢুকেই চমকে ওঠেন বাড়ির বাকি সদস্যারা। তাদের চোখের সামনে বিছানার উপর পর পর ‘শোওয়ানো অবস্থায়’ পড়ে রয়েছেন বাবা ও ছেলে। সাড়া দিচ্ছে না। সাথে সাথেই তাঁদের দুজনকে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা তাদের মৃত বলে ঘোষণা করেন। ঘটনায় কান্নায় ভেঙে পড়েছে পরিবারের সদস্যরা। শুক্রবার সকালবেলা এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে শিলিগুড়ির (Siliguri) ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে। ইতিমধ্যেই দেহ দু’টি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে পুলিশ।
প্রাথমিক ভাবে তদন্তে উঠে এসেছে যা তাতে জানা যাচ্ছে ছেলেকে খুন করে আত্মঘাতী হয়েছে তার বাবা। তাঁরা শিলিগুড়ির ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। সেখানকার বিধায়ক শংকর ঘোষের বাড়ির কাছেই তাঁদের বাড়ি। জানা গিয়েছে, ছেলেটি ছিল মানসিক ভারসাম্যহীন। হাত-পাও সেইভাবে নাড়াতে পারত না ঠিকঠাক। কথা বলতেও জড়তা ছিল। সবসময় ছেলেকে নিয়েই থাকতেন বাবা। মানসিক ভারসাম্যহীন সেই ছেলেকে তাই বিরিয়ানির সাথে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে নিজেও আত্মঘাতী হয়ে যান বাবা।
জানা গেছে বাকিদিনের মতোই বৃহস্পতিবার রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে ঘুমিয়ে পড়েন তাঁরা। সকালে ঘর থেকে উদ্ধার করা হয় তাঁদের দেহ। সাথে সাথে খবর দেওয়া হয় পুলিশের কাছে। পুলিশ আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার করে দেহ।
প্রাথমিকস্তরে এটাই মনে করা হচ্ছে যে , ওই ব্যক্তি গতকাল রাতে ছেলেকে বিরিয়ানির সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়েছিলেন। সন্তানকে খুন করেন তিনি তারপর শ্বাসরোধ করে। পরে ওই ব্যক্তিও গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন। কেউই বিষয়টি বিন্দুমাত্র টের পাননি বলেই দাবি পরিবারের সদস্যদের একই বাড়িতে থাকা সত্ত্বেও। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন সকলে ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর।
প্রতিবেশীরা বলছেন, ইদানিং সুভাষ এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন যে, আত্মীয়রা বাড়িতে কেউ আসতে পারতেন না। সবার হাত তুলত গায়ে। কিছু রাখা যেত না জিনিসপত্র। সব জিনিসপত্র ভাঙচুর করতেন। দেখতে পেলে পাড়ার লোকেদের, তেড়ে যেতেন তাঁদের দিকেও। কোনও সুরাহা হয়নি অনেক টাকাপয়সা খরচ করেও। মনে হয় চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছিলেন না ছেলে। বা ছেলে হয়তো চিকিৎসা করাচ্ছিলেন না ঠিকমতো। সমস্যা নিয়ন্ত্রণের বাইরেও চলে যেত অনেকসময়।
পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, পরিবারের সদস্যদের অবসাদ তো ছিলই ছেলেটি অসুস্থ থাকার কারণে। তবে ঠিক কী হয়েছিল গতকাল, যার কারণে নিজের ছেলেকে খুন করে আত্মঘাতী হলেন ওই ব্যক্তি এখনও তা নিয়ে ধোঁয়াশা। তবে, এর রহস্যভেদ হবে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বললে মনে করছেন তদন্তকারীরা।