এসে গেল খ্রিস্টধর্মবলাম্বী তথা প্রায় সারা দুনিয়ায় মানুষের সবচেয়ে জনপ্রিয় উত্সব বড়দিন। গোটা পৃথিবীর মানুষেরা এই দিনটি পালন করেন। ২৫ ডিসেম্বর কেক এনে খাওয়া হোক অথবা আলো দিয়ে ক্রিসমাস ট্রি সাজানো হোক, আমরা প্রায় সকলেই খুশির সাথে পালন করি বড়দিন। আর বড়দিনের সাথেই ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে ক্রিসমাস ট্রি। কিন্তু কেন ক্রিসমাস নাম শুনলেই আমাদের মননে আসে আলোর মালায় সেজে ওঠা ক্রিসমাস ট্রি। কেন এত উৎসাহ সহকারে সাজিয়ে তোলা হয় এই ট্রি, সেটা জানেন?
মনে করা হয়, বহু যুগ আগে উত্তর ইওরোপে প্রথম ক্রিসমাস ট্রি-র সাজানোর রীতি শুরু হয়। বড়দিনে সুখ এবং সমৃদ্ধির প্রতীক বলে মনে করা হয় এই ক্রিসমাস ট্রিকে। উত্তর ইওরোপের মানুষদের বিশ্বাস ছিল যে বাড়িতে চিরহরিৎ এই ফার গাছ লাগালে দূরে থাকে সমস্ত ধরনের অশুভ শক্তি। আস্তে আস্তে এই রীতি ছড়িয়ে পড়তে থাকে। এই ভাবেই সময়ের সাথেই আস্তে আস্তে বড়দিনে ক্রিসমাস ট্রি সাজানোর প্রথা জনপ্রিয়তা পায়। সেই ডেকোরেশন বদলেছে যুগের সাথে কালের নিয়মে। টুনি লাইটের সঙ্গে খেলনা, চকোলেট, ক্রিসমাস বেল সবই ঝুলিয়ে দেওয়া হয় ক্রিসমাস ট্রি থেকে।
যিশু খৃস্টের জন্মের সঙ্গেও ক্রিসমাস ট্রির কাহিনী জুড়ে আছে। যিশুর জন্মের পর যাঁরা তাঁর বাবা জোসেফ ও মা মেরিকে অভিনন্দন জানাতে, তাঁরা নিজেদের বাড়িতে ফার গাছ আলোর মালা দিয়ে সাজিয়ে দেন।
বড়দিনে ক্রিসমাস ট্রি সাজানো কোথা থেকে এল তা নিয়ে প্রচলিত রয়েছে কয়েকটি গল্প। তাদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় একটি কাহিনী হল রোমের এক দরিদ্র কাঠুরের বাড়িতে একদিন এক শীতে খুদায় কাতর এক শিশু হাজির হয়। কাঠুরে দম্পতি ছিলেন প্রভু যীশুর ভীষণ ভক্ত। তারা সেই শিশুটিকে যত্ন করে খাওয়ালেন, নরম বিছানায় ঘুম পাড়িয়ে দিলেন। সকালে ওই শিশু দেবদূতের রূপ নিয়ে দরিদ্র কাঠুরেদের জানালো, ‘আমিই যিশু’। তাকে বিনা স্বার্থে এত যত্ন করার জন্য কাঠুরে দম্পতিকে তিনি একটি গাছের ডাল উপহার দিলেন এবং বললেন তা মাটিতে পুঁতে রাখতে। এরপর ক্রিসমাস আসলে দেখা গেল যীশুর দেওয়া গাছের ডালটি সোনালি আপেলে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। তখন তারা এই গাছটির নাম দেন ‘ক্রিসমাস ট্রি’। সেই থেকে যিশুর জন্মদিনে সবুজ গাছের অংশ কেটে নিয়ে সেটি আলোয় সাজানোর প্রথা প্রচলিত।
১৬শ শতকে এখন আমরা যেমন ক্রিসমাস ট্রি দেখি সেটি প্রথম জার্মানিতে দেখা যায়। ১৮শ শতকে প্রায় সারা পৃথিবীতেই ক্রিসমাস ট্রি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।