২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর মুম্বই জঙ্গি হামলা ২৬/১১ নামেই পরিচিত৷ জঙ্গি সংগঠন ‘লস্কর–ই–তৈবা’–র শীর্ষ নেতৃত্বের অধীনে চার দফা প্রশিক্ষণ দেওয়া হয জঙ্গিদের। সেপ্টেম্বরে মুম্বইয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় ১০ জঙ্গি। আরব সাগরে তাদের নৌকো ডুবে যাওয়ার উপক্রম হযেছিলএকবার। তবে কোনওক্রমে রক্ষা পায়।
সন্ত্রাসীরা করাচি বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে। তারা গভীর সাগর পর্যন্ত একই জাহাজে ছিল। সাগরে একটি ভারতীয় মাছ ধরার নৌকা ছিনতাই করে এবং মুম্বাই উপকূলে এসে তার নাবিককে হত্যা করে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আরব সাগর পেরিয়ে দক্ষিণ মুম্বইযে ঢুকে পড়ে তারা। তাও আবার কাঁধে বন্দুক ও গোলা–বারুদের ঝোলা নিয়ে। তার পর টানা তিনদিন ধরে সেখানে তাণ্ডব চালায়।
মুম্বইয়ে পা রেখে ২৬ নভেম্বর রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ প্রথমে ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ টার্মিনাস রেল স্টেশনে হামলা চালায় ইসমাইল খান ও আজমল কাসভ। তার পর একে একে কামা হাসপাতাল, লিওপল্ড ক্যাফে,তাজ হোটেল এবং ওবেরয রিসর্টের সদর দফতর এবং নারিমান হাউসে হামলা চালানো হয়। এমনকি মুম্বই বন্দরের অদূরে মাজাগাঁও ও ভিলে পার্লের একটি ট্যাক্সির মধ্যেও বিস্ফোরণ ঘটায় জঙ্গিরা।
অত্যন্ত তৎপরতার সঙ্গে ২৮ নভেম্বর সকালের মধ্যেই মুম্বই পুলিশ ও অন্যান্য রক্ষীবাহিনী তাজ হোটেল ছাড়া বাকি আক্রান্ত জায়গাগুলিকে সুরক্ষিত করে ফেলে। ২৯ নভেম্বর ‘অপারেশন ব্ল্যাক টর্নেডো’র সাহায্যভারতের জাতীয় রক্ষী বাহিনী (এনএসজি) তাজ হোটেলে লুকিয়ে থাকা জঙ্গিদের হত্যা করে বাণিজ্যনগরীকে জঙ্গিমুক্ত করে।
২৬ থেকে ২৯ নভেম্বর জঙ্গি হামলায় নিহত হয়েছিলেন ১৬৪ জন৷ আহত হন অন্তত ৩০৮ জন৷
দীর্ঘ ৬০ ঘণ্টা গুলি বিনিময়ের পর জঙ্গিদের নিকেশ করতে সক্ষম হয় পুলিশ। আজমল কাসভ ছাড়া সকলেরই মৃত্যু হয় । জীবিত অবস্থায় ধৃত একমাত্র জঙ্গি আজমল কাসভ জেরার মুখে স্বীকার করে, তারা পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার সদস্য। দীর্ঘ বিচারের পর ২০১০ সালের ৬ মে মুম্বইয়ের বিশেষ আদালত ধৃত জঙ্গি আজমল কাসভকে মৃত্যুদণ্ড দেয় বিচারক।