আপনি শুনলেও হয়তো বিশ্বাস করবেন না যে প্রত্যেক মাসেই হাজার হাজার মেয়ে, মহিলা কে এখানে এক অভিশপ্ত সপ্তাহ কাটাতে হয়। ঋতুচক্রের সময় যখনই হয় তখনই এই এলাকার মেয়ে থেকে মহিলা সকলকেই বসবাসের অযোগ্য এক কুঁড়ে ঘরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে যদিও তারা স্ব-ইচ্ছায় থাকেন না বা থাকতে চান না। সেখানে তাদের থাকতে রীতিমতো বাধ্য করা হয়।
এই একবিংশ শতকের দাঁড়িয়ে এমনই এক হাড়হিম করা চিত্র ভেসে উঠছে ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের অনুন্নত জেলা গাডচিরোলির মাদিয়া সম্প্রদায়ে। যখন এখানকার কিশোরী বা মহিলাদের পিরিয়ড হয় তখন তাদের অপবিত্র বলে মানা হয় এবং এই কুঁড়ে ঘরে জোর করে থাকতে বাধ্য করা হয়। একাধারে পিরিয়ডসের কষ্ট অন্যদিকে কঠোর নিয়ম মেনে চলতে হয় এই সময়।
যেসব ঘরগুলোতে পিরিয়ডের সময়কালে নারীদের রাখা হয় সেগুলোকে ‘কুর্ম ঘর বা গাওকর’ বলা হয় স্থানীয়ভাবে। গ্রামের একেবারে বাইরে জঙ্গলের কিনার ঘেঁষে এই কুঁড়েঘরগুলো নির্মাণ করা হয়। বলা যায়, তাদেরকে ‘একঘরে’ হয়ে পিরিয়ডের পাঁচ থেকে সাতদিন থাকতে হয়।
সামাজিক ও ধর্মীয় সব অনুষ্ঠানে নারীদেরকে পিরিয়ডের সময়টাতে যোগদান নিষিদ্ধ করা হয়। ঢুকতে দেয়া হয় না মন্দির বা কোন ধর্মীয় স্থাপনায়। শুধু তাই নয়, তাদের যাওয়া নিষেধ রান্নাঘর কিংবা কুয়াতেও। তাদের দিন কাটাতে হয় বাড়ির নারী আত্মীয়দের দেয়া খাবার ও জল খেয়ে। যদি তাদের কোন পুরুষ ছুঁয়ে ফেলে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে স্নান করতে হয় ওই পুরুষকে। কারণ ‘অপবিত্র’ মনে করা হয় ওই নারীকে।
এসব অত্যাচারের ভুক্তভোগী ৩৫ বছরের সুরেখা হালামিও। তিনি বলেন, ওই কুঁড়েতে অসহনীয় গরম আর মশার উৎপাত থাকে গ্রীষ্মকালে। প্রচণ্ড ঠাণ্ডা শীতকালে আর ঘরের চাল দিয়ে অনবরত জল পড়ে বর্ষায়। কুকুর আর শূকরও কখনও কখনও ভেতরে ঢুকে আসে।
এই নারীদের সাহায্য করতে ভেঙে পড়া কুঁড়েঘরের জায়গায় মুম্বাইয়ের খেরওয়াদি সোসাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন আধুনিক পাকা ঘর তোলার একটি প্রকল্প শুরু করেছে। কিন্তু জোর সমালোচনা শুরু হয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির এই কাজ নিয়ে, যে তারা এই অমানবিক প্রথা টিকিয়ে রাখারই উদ্যোগ নিয়েছে তাকে বিলোপের বদলে।
সমালোচকরা বলছেন বরং মাসিকের সময় মেয়েদের আলাদা এই কুঁড়েঘরগুলো একেবারে ভেঙে ফেলাটাই সময়োপযোগী পদক্ষেপ হতো। যদিও সংগঠনটির পক্ষ থেকে এই নারীদের জন্য পাকা ঘর, টয়লেট, ঘুমানোর বিছানা, জল ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে দিয়ে তারা নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাইছে বলেই বলা হয়েছে। এই প্রথা বিলোপের পক্ষে তারাও।