বয়সের ভার অনেক। তবুও ছেদ পড়েনি ঐতিহ্যে। আজও সেই একইভাবে কৃষ্ণনগর রাজবাড়িতে পূজিতা হন মা জগদ্ধাত্রী। তবুও কৃষ্ণনগরের ‘বুড়িমা’ যেন আলাদাই আকর্ষণ পূণ্যার্থী ও দর্শকদের মধ্যে। দুটিই কৃষ্ণনগরের প্রাচীন জগদ্ধাত্রী। একটি রাজবাড়ির পুজো অন্যটি বারোয়ারি। তবে বুড়িমা যেন সকলের উর্ধ্বে। কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর ঐতিহ্য ও আবেগের একটি নাম চাষাপাড়া ‘বুড়িমা’। কৃষ্ণনগর রাজবাড়ীর পুজোর প্রচলনের পর থেকেই চাষাপাড়া বারোয়ারি অর্থাৎ বুড়িমার পুজো শুরু হয় বলে জনশ্রুতি। এই পুজো নিয়ে একটি জনশ্রুতি আজও প্রচলিত। মা জগদ্ধাত্রী নাকি স্বয়ং রাজা কৃষ্ণচন্দ্রকে স্বপ্নাদেশ দিয়েছিলেন।
কথিত আছে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র কোনও এক সময় রাজবাড়ির পুজোর বিপুল ব্যয়ভার নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন। সেই সময়ই মা জগদ্ধাত্রী তাঁকে স্বপ্নাদেশ দিয়ে বলেন, চাষা পাড়ার যে সমস্ত লেঠেলরা আছেন তারাই দেবীর জগদ্ধাত্রী পুজোর আয়োজন করবেন। সেই থেকেই শুরু কৃষ্ণনগরের চাষা পাড়ায় বারোয়ারি জগদ্ধাত্রী পুজো। কালক্রমে আনুমানিক ৭০-৭৫ আগে এখানকার মাতৃ প্রতিমার নাম হয় বুড়িমা। সেই থেকে আজ পর্যন্ত কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর সেরা আকর্ষণ বুড়িমা। আরেকটি জনশ্রুতি অনুযায়ী, কৃষ্ণনগরের রাজা সাধারণ মানুষের মধ্যে জগদ্ধাত্রী পুজো ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে অর্থসাহায্য় করতেন। সেই থেকেই চাষা পাড়া সর্বজনীনের পুজো চালু হয়েছিল। তবে বর্তমানে সাধারণ মানুষের দান এবং চাঁদাতেই বুড়িমা পুজো হয়।
গোটা কৃষ্ণনগরবাসীর কাছেই বুড়িমা খুব জাগ্রত দেবী। আর সেই থেকে বুড়িমার মহিমা ছড়িয়েছে রাজ্য ছাড়িয়ে দেশ ও বিদেশেও। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পুজোর দিন দান স্বরূপ নগদ অর্থ শাড়ি এবং সোনা-রুপোর গয়না আসে বুড়িমার কাছে। মানুষের বিশ্বাস, মন দিয়ে বুড়িমার কাছে কিছু চাইলেই তা পূরণ হয়। তাই কৃষ্ণনগরে বুড়িমাকে নিয়ে রয়েছে অনেক অলৌকিক কাহিনী। আজও কৃষ্ণনগরের সমস্ত প্রতিমা আগে বিসর্জন হবে আর সবার শেষে বুড়িমা। বুড়িমা যতক্ষণ না পর্যন্ত বিসর্জন হয় রাস্তার দুই ধারে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকেন ভক্তরা।