ইতিহাসের পাতার সঙ্গে জড়িয়ে আমাদের আশেপাশের অনেক কিছুই। আমরা গেছিলাম মগরাহাট থানার অন্তর্গত গোকুর্নী এলাকায় হংসগেড়িয়া মহাশ্মশানে। পৌরানিক মতে এই মহাশ্মশানের উপর থেকে বয়ে গেছিলেন মা গঙ্গা। মিলিত হন গঙ্গাসাগরে। আর এই জায়গায় তিনি শঙ্খ বাজিয়ে তার আগমনি বার্তা দিয়েছিলেন। সেই থেকেই এই জায়গার নাম হংসগেড়িয়া। আনুমানিক ১৫০০ বছর আগের কথা। সেই সময় এই জায়গা ছিল ঘন জঙ্গলে ঢাকা। শোনা যায় পঞ্চমুণ্ডাশনে অর্থাৎ পাঁচটি জীবজন্তুর কাটা মুণ্ডু একত্রিত করে, তার উপর বসে এই জঙ্গলে তপস্যা করতেন কৈশাল পন্ডিত নামে এক সাধক। শ্মশানের মধ্যে আজও তার সেই বসার জায়গা বাধিয়ে রাখা হয়েছে। এলাকার বয়স্ক মানুষজনের কাছে শোনা যায় সেই পঞ্চমুণ্ডির আসন এককালে স্পর্শ পর্যন্ত করা যেতো না। কালের ফেরে এখন আর তা হয় না। শোনা যায় ১৩৬৫ সালে গভীর জঙ্গলের একাংশ কেটে সূর্যকান্ত মন্ডল নামে এক ব্যাক্তি এই শ্মশানের প্রতিষ্ঠা করেন।
তিনি নিঃসন্তান ছিলেন। মানুষের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন। এই শ্মশান যখন তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তখন তিনি স্বপ্নাদেশ পান। এরপরেই তিনি এই শ্মশান কে মহাশ্মশানে তৈরি করেন। গ্রামের লোকজন এবং এই মহাশ্মশানে আগত মানুষদের সহায়তায় আস্তে আস্তে এই এখানে শুরু হয় মায়ের আরাধনা। সেই থেকেই রীতিনীতি মেনে আজও চলে আসছে শ্মশানকালীর পূজা। শ্মশানের মূল প্রবেশদ্বারে মহাদেবের একটি মূর্তি রয়েছে। একটু ভিতরে প্রবেশ করলেই বাম দিকে রয়েছে সমাধি ক্ষেত্র। এখানে যাদের অপঘাতে মৃত্যু হয় তাদেরকে দাহ না করে এখানেই সমাধিস্থ করা হয়। যেখানে দাহ করা হয়, সেখানে প্রবেশের পূর্বেই ঠিক মাথার উপর বাম দিকে চিত্রগুপ্ত, মাঝে স্বয়ং যমরাজ এবং বামদিকে যমদূতের মূর্তি রয়েছে। শ্মশানের মধ্যে মূল চুল্লির পাশাপাশি ৩ টি চুল্লি করা আছে, এবং ঠিক মাঝখানে রয়েছে পুরুষ ও মহিলা মৃতদেহ স্নান করানোর ভিন্ন ভিন্ন জায়গা। সব কিছু মিলিয়ে পূরান এবং ইতিহাস সাক্ষী হয়ে আনুমানিক ১৫০০ বছর ধরে এই জাগ্রত মহাশ্মশান দাঁড়িয়ে আছে গভীর জঙ্গলের মধ্যে।