কার্তিক মাসের অমাবস্যায় বাংলা উড়িষ্যার পূজিত হন মা কালী। ভারতে এই অমাবস্যায় প্রায় প্রত্যেক ঘরে লক্ষ্মী পুজোর প্রচলন আছে। কিন্তু কালী পূজা, লক্ষ্মী পূজা ছাড়াও আরো এক দেবীর পূজা হয়ে থাকে। এই দেবী পরিচয় লক্ষীর দিদি হিসেবে। তাই দীপান্বিতা কালীপূজায়, আরাধ্য হয়ে ওঠেন দেবী অলক্ষীও।
এই রীতি শুধু বাংলার ঘরে ঘরেই নয়। কালী পূজার সময় বহু জায়গাতেই এই অলক্ষী পূজার প্রচলন আছে। আসলে আমরা কেউই চাইনা অলক্ষী ঘরে প্রবেশ করুক। তাই এর পুজো করার উদ্দেশ্যই হচ্ছে পুজোর পরে একে বিদায় করা। প্রচলিত কথায় এই পুজো অলক্ষী-বিদায় নামে পরিচিত।
কিভাবে শুরু হল এই পুজো? এই বিষয়ে জানতে গেলে আমাদের জানতে হবে এর সাথে লুকিয়ে থাকা সমাজের এক প্রাচীন রীতি আর কিছু পৌরাণিক উপাখ্যান এর ব্যাপারে।
চলতি কথায় আমরা বলে থাকি লক্ষীর দিদি অলক্ষী। পুরাণ অনুসারে দেবী লক্ষ্মীর অর্ধেক ভাগই হল অলক্ষ্মী। কেন এমনটা তা নিয়ে নানা মতবাদ প্রচলিত আছে।
বলা হয় অলক্ষ্মীর জন্ম লক্ষীর সাথেই। সৃষ্টি কর্তা ব্রহ্মার মুখাওবের উজ্জ্বল অংশ থেকে জন্ম নেয় লক্ষী যে নাকি সুখ সমৃদ্ধি শান্তি ও শুভ কার্যের প্রতীক। একই সাথে ব্রহ্মার আঁধার পরিপূর্ণ পৃষ্ঠদেশ থেকে জন্ম নেয় অলক্ষী যিনি অশান্তি, দুর্ভাগ্য ও অশুভতার প্রতীক।
অলক্ষ্মীর জন্মের সাথে জড়িয়ে আছে একটি কাহিনীও। মনে করা হয় দেব আর অসুরের মধ্যে সমুদ্র মন্থন করার সময় জন্ম নেন অলক্ষ্মী। সমুদ্রমন্থনের সময় যখন গভীর সমুদ্রের তলদেশ থেকে অমৃতের পাত্র নিয়ে জন্ম হয় দেবী লক্ষ্মীর। আর তার ঠিক আগেই জন্ম নেন অলক্ষ্মী। দেবী অলক্ষী যেন সবেতেই লক্ষ্মীর বিপরীতধর্মী। লক্ষী যেমন শান্ত তার দিদি অলক্ষী ততটাই অশান্ত। যেমন সৌভাগ্যের প্রতীক লক্ষী তেমনই অলক্ষী দুর্ভাগ্যের। লক্ষী পূজোর দিন গাধার পিঠে চেপে হাজির হন গৃহস্থের দুয়ারে।
কিন্তু এখানে একটা প্রশ্ন আসেই। এমন দেবীর আরাধনা কেন করা হয় আর কালী পূজার দিনেই বা কেন করা হয়। যেহেতু মনে করা হয় অমাবস্যার শুভ তিথিতে লক্ষ্মীপুজোর সময়, লক্ষ্মীর সঙ্গে গৃহে আসেন অলক্ষ্মীও। তাই কালী পুজোর দিন লক্ষ্মী – অলক্ষ্মী উভয়ের পুজো করে, লক্ষ্মী কে স্বাগত জানানো হয় আর অলক্ষ্মীকে বিদায় করা হয়। আর তাছাড়া অমঙ্গল ও অশুভের রূপ হলেও, অলক্ষ্মীকে ভগবতীর এক রূপ বলে কল্পনা করা হয়। তাই বিদায়ের আগে তাকে পুজো করা হয়।