ভারতে গত বছর এই সময়েই ডেল্টার প্রভাবে করোনা সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। যা দেশে মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ বয়ে আনে। সেই সময় এর কারণে কত ঘরের দ্বীপ নিভে যায়, আর কত পরিবারকে নিজের প্রিয়জন খোয়াতে হয়েছে তার ইয়াত্তা নেই। সেই যন্ত্রণাদায়ক ২০২১ সালের কালো অধ্যায় যা কেউ মনে করতে চাইবে না। কিন্তু করোনা মহামারী সম্পর্কিত এমন একটি ঘটনা সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে যা সবাইকে আবেগাপ্লুত করবে। ৫৩ বছর বয়সী মন্দাকিনী মানকে তার ২৭ বছর বয়সী ছেলে অক্ষয়কে হারিয়েছিলেন। কোভিডের কারণে গত বছর মারা যান অক্ষয়। কিন্তু মা সন্তানের এই মৃত্যু মানতে পারেন নি। নিয়তি কে হারিয়ে নিজের ছেলেকে ফিরিয়ে আনতে চাইলেন। কিভাবে? এই তিপান্ন বছর বয়সে এসে আবার মা হতে চাইলেন মন্দাকিনী। তার স্থির বিশ্বাস ছিল সন্তান জন্ম দিলে অক্ষয় ফিরবে তার কাছে। আর এই বিশ্বাস থেকেই শুরু হয় কঠিন লড়াই। সব বাধা বিপত্তি পেরিয়ে মা হন তিনি। প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীর একদিন আগে বৃহস্পতিবার একটি ছেলের জন্ম দেন। নবজাতকের নামও প্রথম ছেলের নাম অক্ষয় এর নামেই রাখা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডাক্তাররা বলেছিল যে আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির জন্যই মন্দাকিনীর পক্ষে এই বয়সে একটি সুস্থ শিশুর জন্ম দেওয়া সম্ভব হয়েছে, তবে আসল কৃতিত্ব তার “সংকল্প এবং মানসিক জেদের”। ১৫ই এপ্রিল, ২০২১-এ ছেলে অক্ষয় মারা গেলে মন্দাকিনি শোকে পাথর হয়ে যান। তবে শোক কাটিয়ে, তার ছেলেকে এই পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার জন্য তিনি আবার মা হওয়ার সংকল্প করেছিলেন।
মন্দাকিনির স্বামী বিনোদ একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক যিনি উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন। দম্পতির স্বাভাবিক গর্ভধারণের সম্ভাবনা ছিল শূন্যের কাছাকাছি। তাই মন্দাকিনী নাগপুরের বন্ধ্যাত্ব ও IVF বিশেষজ্ঞ ডাঃ সঙ্গীতা তাজপুরিয়ার সাথে যোগাযোগ করেন। তাজপুরিয়া জানান, “আগের বছর ১১ই মে মন্দাকিনী তার মা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি যে কোনো ধরনের চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। ভাগ্যক্রমে, তিনি কিছু আধুনিক চিকিত্সা পদ্ধতি শুরু করার জন্য যথেষ্ট ফিট ছিলেন। তার BMI এবং অন্যান্য শারীরিক পরিস্থিতি ঠিক ছিল।
প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ডাক্তাররা তাকে আবার পিরিয়ড শুরু করার ওষুধ দেন। মন্দাকিনীর শরীর ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানায়। মন্দাকিনির ঋতুস্রাব স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসায় চিকিৎসকরা আগস্টে আইভিএফ চিকিৎসার জন্য যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু, মন্দাকিনী জুলাই মাসেই আইভিএফ পদ্ধতি শুরুর জন্য জোর দিয়েছিলেন। ডাঃ তাজপুরিয়া বলেন, মার্চ মাসে যখন মন্দাকিনী বলেছিলেন যে তিনি ১৫ই এপ্রিল বা তার আগে তার সন্তান চান, আমি বুঝতে পেরেছিলাম তিনি আগে কেন চিকিৎসা শুরু করতে চাইছেন।’
২৩শে মার্চ থেকে চিকিৎসকরা মন্দাকিনির অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে থাকেন। ডাক্তার এপ্রিলের যেকোনো দিন সি-সেকশনের পরামর্শ দেন। মন্দাকিনী ১৪ই এপ্রিল পর্যন্ত অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ডাঃ তাজপুরিয়া বলেন, ‘১৪ এপ্রিল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ডেলিভারি করার সিদ্ধান্ত ছিল দম্পতির। তারা এই দিনটিকে শুভ বলে মনে করেন।’ এরপরে ১৫ই এপ্রিল তাদের সন্তান অক্ষয়ের মৃত্যু বার্ষিকীর একদিন আগে জন্মায় তাদের সন্তান।
মন্দাকিনির ৭৮ বছর বয়সী মা বলেছেন যে তার নবজাতক নাতি দেখতে ঠিক যেন অক্ষয় যে ২৮ বছর আগে জন্মগ্রহণ করেছিল। তিনি বলেন, ‘একজন মা যদি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হন, তবে তিনি নিয়তিকেও হারাতে পারেন। আমি ভীষণ খুশি মন্দাকিনীর কোল আলো করে নবজাতক আসায়।’