বহু মানুষের জীবনে রোডট্রিপ -এ যাওয়ার ভীষণ সখ থাকে। কিন্তু সেই রোডট্রিপে যদি সঙ্গী হয় গা শির শির করা কিছু ভৌতিক অভিজ্ঞতা? ভূত বা আত্মায় কেউ বিশ্বাস করেন কেউ কেউ মানেন না। কিন্তু এই প্রতিবেদনে আজ থাকবে ভারতের এমন পাঁচটি ভুতুড়ে রাস্তার যেখানে নাকি পর্যটকরা দেখা পান তেনাদের। নানা সময়ে এই রাস্তাগুলি দিয়ে সফর করতে গিয়ে নানা ধরনের অদ্ভুত এবং অস্বাভাবিক অভিজ্ঞতার মুখে পড়েছেন বহু পর্যটকই। রইল সেই সব রাস্তার খোঁজ
১) গাটা লুপস:
মানালি – লেহ্ হাইওয়ে প্রতিটি বাইকপ্রেমীদের কাছেই ভীষণ জনপ্রিয়। কিন্তু উচ্চ পার্বত্য এই অঞ্চল দুর্গম রাস্তা এবং সর্পিল বাঁক এর জন্য পর্যটকদের কাছে বেশ বিপদসঙ্কুলও বটে।কিন্তু শুধু তাই নয় শোনা যায়, ১৫,৫৪৭ ফুট উঁচুতে অবস্থিত নাকিলা পাসে যাওয়ার পথে পড়া এই গাটা লুপসেই রয়েছে নাকি আত্মার আনাগোনা।এই ঘিরে রয়েছে একটি স্থানীয় গল্প। বলা হয় এই রাস্তায় লেহ্-গামী এক ট্রাক ড্রাইভারের ট্রাক মাঝরাস্তায় খারাপ হয়ে যাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তা খাদে পড়ে যায়। আর সেই সহকর্মী আটকে পড়েন বরফাবৃত রাস্তায়। আর তিনি পড়েন এক অতি ভয়ানক স্নো-স্টর্মের কবলে। চূড়ান্ত ঠান্ডায় দিনের পর দিন সেই সহকর্মী খাদ্য বা পানীয় না পেয়ে মারা যান তিনি। এর পর থেকে সেই আত্মাকে নাকি মাঝে মধ্যেই পর্যটকরা দেখতে পান খাবার আর জলের সন্ধানে হাহাকার করতে। বর্তমানে তার স্মৃতির উদ্দেশ্যে এই লুপসে স্থাপন করা হয়েছে এক মন্দির, তার আত্মার শান্তিকামনা করে ওই মন্দিরে এই রাস্তায় যাওয়া পর্যটকরা রেখে আসেন খাবার বা জলের বোতল।
২) মুম্বই-গোয়া হাইওয়ে কাশেদি ঘাট:
বলা হয় এই রাস্তায় ডাইনিদের বাস । এই রাস্তায় সফররত বহু পর্যটকই জানিয়েছে কাশেদি ঘাট দিয়ে যাওয়ার সময় মুখ, পিঠ এবং ঘাড় নাকি নখের আঁচড় দিয়ে চিরে দেয় ডাইনিরা। বহু পর্যটক এমন ক্ষতস্থানও দেখিয়েছেন, যেগুলি মনে হয় যেন l নখের আঁচড় পড়েছে। রাস্তার হঠাৎই নাকি বন্ধ হয়ে যায় গাড়ির স্টার্ট! সঙ্গে কোনও আমিষ খাবার দাবার থাকলে তাও গায়েব হয়ে যায়। কাশেদি ঘাটে সফররত পর্যটকদের আমিষ খাবার সাথে নিয়ে না চলার উপদেশ দেওয়া হয়।
৩) সত্যমঙ্গল:
ভারতের তামিলনাড়ুতে অবস্থিত এই জঙ্গলে অভাব নেই ডাকাতের, এরমধ্যে দুর্ধর্ষ ডাকাত ভীরাপ্পানের নাম প্রায় গোটা ভারতের সকলেরই জানা, যে জঙ্গল তার খাস এলাকা ছিল, তার মধ্যে দিয়ে কিন্তু দু’বার ভাববেন বেড়াতে যাওয়ার আগে। এই সড়কপথ দক্ষিণ ভারতে ন্যাশনাল হাইওয়ে ২০৯-এর অন্তর্গত তামিলনাড়ুর সবচেয়ে ভূতুড়ে জায়গা হিসাবে পরিচিত। পর্যটকরা নাকি প্রায়শই এখানে দেখতে পেয়েছেন ভূত, উড়ন্ত লণ্ঠনের মতন দৃশ্যের, রক্ত জল করে দেওয়া আর্তনাদ সারা রাস্তা জুড়ে শুনতে পেয়েছেন।
৪) দিল্লি ক্যান্টনমেন্ট রোড:
দিল্লি ক্যান্টনমেন্ট রোড সম্ভবত দিল্লির সবচেয়ে বিখ্যাত ভূতুড়ে রাস্তা। বহু মানুষ ভুতুড়ে কারণে এই রাস্তাটি এড়িয়ে চলেন, কিন্তু এই রাস্তায় বহু অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী আবার ভূত আবিষ্কারের নেশায় ছুটে আসেন। গুজব বলে, মোটামুটি মাঝরাতের পরে এই রাস্তায় গাড়ি চালালে নাকি তেনাদের দেখা মিলবে, ভূতের গল্পের সেই এক অতিপরিচিত স্বরূপ, সাদা শাড়ি পরা এক রহস্যময়ী নারীর। এই গল্প তো আমাদের সবারই জানা। এই মহিলার লিফট চাওয়ার গল্পের কথা বহু পর্যটকদের থেকে শোনা গেছে । আপনি যদি গাড়ি ছুটিয়ে, লিফট না দিয়ে এড়িয়ে চলেন, তাহলে দেখবেন সেই অশরীরী গাড়ির গতির সাথে তাল মিলিয়ে আপনার সঙ্গেই ছুটে চলেছে।
৫) রাঁচি-জামশেদপুর রোড (ঝাড়খণ্ড):
এই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের মত অনুযায়ী, রাঁচি থেকে জামশেদপুর যাওয়ার যে রাস্তা অর্থাৎ ৩৩ নম্বর জাতীয় সড়কটি নাকি অভিশপ্ত। এই রহস্যজনক রাস্তার এক জায়গায় দুটি ছোট মন্দির আছে দু’দিকে। কথিত আছে যে মন্দির দুটির সামনে যদি গাড়ি দাঁড় করিয়ে প্রণাম না করা হয় তাহলে বিপদ ঘটতে পারে। আপনি নাস্তিক হলেও হয়তো আপনার নিজের মত পরিবর্তন করতেই হবে এ পথে আসলে।
অবশ্য একবিংশ শতাব্দীতে ভৌতিক এই সব কাহিনী বিশ্বাস না হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু এই সব পথে কাহিনী আর বিশ্বাসের মিশেলে হয়েছে বহু কাহিনী।