একদিনে ৪০ খানা রুটি খাওয়া তার কাছে কোনো ব্যাপার ছিল না। প্রতিদিন ঠিক এত গুলো রুটিই বরাদ্দ ছিল মধ্যপ্রদেশের (Madhya Pradesh) শিবপুরী জেলার খোড় গ্রামের বাসিন্দা সন্দীপ আদিবাসীর। মাত্র ১২ বছর বয়সের ছেলের এমন খাদ্যাভ্যাসে হতবাক হত অনেকেই। কিন্তু এই খাদ্যাভাস যে তার শরীরের জন্য কতোটা ক্ষতিকারক হতে চলেছে তার বোধহয় আন্দাজ পাননি কেউই।
অত্যাধিক কার্বহাইড্রেট জাতীয় খাবার প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি খাওয়ার জন্য শরীরে বাড়ছিল সুগারের মাত্রা। শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। রক্তে শর্করা থাকার কারণে দৃষ্টিশক্তিতেও পড়ে সন্দীপ আদিবাসীর (Sandeep Adiwasi)। কিছুদিন আগে শরীর অত্যাধিক খারাপ হয়ে যাওয়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে তার পরিবার।
সন্দীপের বাড়ির লোক জানায়, সন্দীপের দৃষ্টিশক্তি আস্তে আস্তে লোপ পেতে শুরু করে। এরপর একদিন হঠাৎ করেই নিজের বাড়িতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে সন্দীপ। সন্দীপের পরিবারের লোকজন রীতিমতো ভয় পেয়ে গিয়েছিল। এরপরেই সন্দীপের বাবা বনওয়াড়ি আদিবাসী তাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন।
হাসপতালের চিকিৎসকরা তার শরীর পরীক্ষা করে রীতিমত অবাক হয়ে যান। দেখেন মাত্র ১২ বছরের ছেলের রক্তে শর্করার মাত্রা ১২০৬ মিলিগ্রাম। চিকিৎসকরা বলেন, হাসপাতালে যখন সন্দীপকে নিয়ে আসে তার বাবা তখন শুধু তার শ্বাস প্রশ্বাসই শুধু কায়েম ছিল। শরীরের একাধিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাজ করাও বন্ধ করে দিয়েছিল। তাকে পরীক্ষা করে চিকিৎসকরা দেখেন মাথায় পুঁজ-রক্ত জমে যাওয়ার কারণেই জ্ঞান হারিয়েছে সন্দীপ।
তার মাথা থেকে ৭২০ মিলিগ্রাম পুঁজ-রক্ত বার করেছেন ডাক্তার। রক্তে অত্যাধিক শর্করার ফলে রেটিনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দৃষ্টিশক্তি ভীষণ ক্ষীণ হয়ে এসেছিল সন্দীপের। কিন্তু ব্লাড সুগারের মাত্রা এত বেশি থাকার কারণে চোখের অপারেশন করতে পারছিলেন না চিকিৎসকরা।
রক্তের সুগারের মাত্রা কমানোর জন্য প্রতিদিন তাকে ৬ ইউনিট করে ইনসুলিন দেওয়া হয়েছে। এরপর আস্তে আস্তে নিয়ন্ত্রণে আসে তার রক্তের শর্করার পরিমাণ। চিকিৎসকরা ঝুঁকি নিয়েই তার চোখের অপারেশন করতে চান। পরিবার অনুমতি দেওয়ায় চিকিৎসকরা ঝুঁকি নিয়ে হলেও সফল অপারেশন করেন।
এখন অনেকটাই সে দেখতে পাচ্ছে চোখে, সুগার কমার কারণে চোখের অপারেশন করাও সম্ভব হয়েছে। আগের মতো আস্তে আস্তে দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক হচ্ছে তার। শরীরে সুগার লেভেল এখনও বেশী থাকলেও ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠেছে সন্দীপ আদিবাসী। তবে তাকে সুস্থ থাকতে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে খাওয়া দাওয়া। পাশাপাশি করতে হবে নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন। কিন্তু রক্তে সুগার বোধহয় তার থেকেই যাবে।