হঠাৎ দেখলেই যেন গুহায় চুপটি করে ঘুমিয়ে আছে সিংহ শাবকটি মনে হবে। কাছে গিয়ে ডাকলেই যেন গর্জন করে জেগে উঠবে! গুহার কাদায় মাখামাখি গায়ের সোনালি লোমগুলো ।
সাইবেরিয়ার আর্কটিক অঞ্চল বরফে আচ্ছাদিত। একটি সিংহশাবক সেখানকার বরফস্তূপে ঢাকা। দেখে মনে হয়, শাবকটি ঘুমিয়ে আছে, জেগে উঠবে কেউ স্পর্শ করলেই । শাবকটি আসলে মৃত। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ২৮ হাজার বছর আগের প্রাণীটি। কিন্তু এত দিনেও শারীরিক অবয়বের কোনো ক্ষতি হয়নি তার। এমনকি ঝরে পড়েনি গায়ের লোমও।
বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন স্পার্টা ভালোবেসে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সিএনএন -এ খবরটা প্রকাশিত হয়েছে।
এখনো সম্পূর্ণ অক্ষত স্পার্টার দাঁত, নখ, চামড়া। নরম টিস্যু আর অঙ্গগুলো পচন ধরেনি মমি হয়ে গেলেও। তার এখনো জীবন্ত সিংহের মতো লোমগুলোও।
এর আগে একই গুহাতে মিলেছিলো আরও একটি সিংহ শাবকের সন্ধান ২০১৭ সালে। ওই গুহায় মাত্র ৪৯ ফুটের ব্যবধানে গুহা সিংহ দুটির মমি পায় বিজ্ঞানীরা রাশিয়ার সেমুলেখ নদীর ধারে।
২০১৭ সালে পাওয়া শাবকটির নাম বরিস দেওয়া হয়েছিলো । বরিসের প্রায় ৪৩ হাজার ৪৪৮ বছর বয়স! তবে, স্পার্টার মমির অবস্থা অনেক ভালো বরিসের চেয়ে।
প্রথমে মনে করা হয়েছিল, একই সিংহের পেটে জন্মেছিল সিংহশাবক দুটি। নতুন এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বয়সের পার্থক্য ১৫ হাজার বছর এ দুই শাবকের। বয়স নির্ধারণের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি রেডিও কার্বন ডেটিংয়ের তথ্যমতে, ৪৩ হাজার ৪৪৮ বছর আগে জন্মেছিল বরিস।
এখন পর্যন্ত বরফযুগের যেসব প্রাণীর মৃতদেহের সন্ধান পাওয়া গেছে, তার মধ্যে স্পার্টাকে সবচেয়ে অক্ষত অবস্থায় পাওয়া যায়,এই সিংহশাবক গুলোকে নিয়ে করা গবেষণার লেখক ও সুইডেনের স্টকহোমের প্যালিওজেনেটিকস সেন্টারের অধ্যাপক লাভ দালেন বলেছেন । তবে কিছুটা ক্ষতি হয়েছে বরিসের দেহাবশেষের। তাঁদের তথ্যমতে, সিংহশাবক দুটি যখন মারা যায়, তখন এগুলোর মাত্র ১ থেকে ২ মাস বয়স ছিল।
সাইবেরিয়ার এই অংশে ঘুরে বেড়াতো তুন্দ্রা নেকড়ে, লোমশ গন্ডার, ম্যামথ, বাইসনরা, ভাল্লুক তুষারযুগে। কেভ লায়নরা (গুহা সিংহ) একইসঙ্গে ছিলো। আকারে সামান্য বড় ছিলো এরা এখনকার আফ্রিকান সিংহদের চেয়ে। কিন্তু তারা কীভাবে থাকতো সাইবেরিয়ার প্রবল ঠাণ্ডায়? সেটা এখনও একটা ধাঁধাঁ বিজ্ঞানীদের কাছে।