চলন্ত ট্রেনে হঠাৎই মহিলার উঠল প্রসব যন্ত্রণা। কিন্তু চলন্ত লোকাল ট্রেনে কোথায় মিলবে চিকিৎসা ব্যবস্থা। কোথায় বা ডাক্তার, কোথায় বা প্রসবের ব্যাবস্থা! তাহলে উপায়? অবশেষে চলন্ত ট্রেনের কামরাই হয়ে উঠল আঁতুড়ঘর। মহিলা যাত্রীরাই হলেন ওই মহিলার ধাইমা। কম্পার্টমেন্টে উপস্থিত মহিলা যাত্রীদের সহায়তায় সন্তান প্রসব করলেন ওই মহিলা। ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম দিলেন তিনি। আর এই ঘটনার সাক্ষী থাকলেন শান্তিপুরগামী লোকাল ট্রেনের যাত্রীরা। বুধবার রাতে এই ঘটনা ঘটলেও তা লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ল আজ বৃহস্পতিবার।
জানা গিয়েছে, উপস্থিত যাত্রীরা প্রসবের পর ট্রেন অন্তিম স্টেশন শান্তিপুরে পৌঁছলে রেল পুলিশকে খবর দেন। তখন তাঁরা যত দ্রুত সম্ভব মা ও সন্তানকে শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। বর্তমানে তাঁরা দু’জনেই সুস্থ আছেন। জানা গেছে ট্রেনে ওই মহিলার সঙ্গে তাঁর স্বামীও ছিলেন। তবে পাশের কামরায়। কারণ মহিলা যাত্রা করছিলেন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত কামরায়। মহিলা কম্পার্টমেন্টে উপস্থিত যাত্রীরা পাশের কামরায় খবর পৌঁছতেই ওই মহিলার স্বামী ছুটে আসেন।
সংবাদ সুত্রে জানা গেছে, উত্তর ২৪ পরগনার হালিশহরের বাসিন্দা সমীরণ ভৌমিক। তিনি পেশায় রেলের ঠিকা কর্মী। ঘটনার দিন সকালেও কল্যাণী জে এন এম হাসপাতালে গর্ভকালীন সময়ের পরীক্ষা নিরীক্ষা করাতে যান মহিলা, সেখানে অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে পর্যাপ্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসক জানান মহিলার সন্তান প্রসবে এখনও অনেক দেরি আছে। তাই বুধবার রাতে গর্ভবতী স্ত্রী পায়েল ভৌমিককে নিয়ে নদিয়ার শান্তিপুরে শ্বশুরবাড়িতে পৌঁছে দিতে যাচ্ছিলেন সমীরণ বাবু। কিন্তু ট্রেন ফুলিয়া স্টেশন ছাড়তেই পায়েল দেবীর অনুভব করেন প্রসব যন্ত্রণা। কোনো উপায় না পেয়ে তিনি তখন বিষয়টি কামরায় উপস্থিত যাত্রীদের জানান। যাত্রীরা খবর পৌঁছে দেন তার স্বামীকে। পাশের কামরা থেকে এসে রীতিমত চিন্তায় পড়ে যান সমীরণ বাবু।
এই পরিস্থিতিতে দিশেহারা হয়ে পড়া ওই দম্পতির পাশে দাঁড়ান ট্রেনের মহিলারা। তাঁরাই মহিলাকে ঘিরে ধরে সমস্ত ব্যবস্থা করে কামরায় মহিলার সন্তান প্রসব করান। চলন্ত ট্রেনেই জন্ম নেয় কন্যা সন্তান। ফুলিয়া থেকে শান্তিপুর স্টেশনের মাঝেই ট্রেনে কন্যা সন্তানের জন্ম দেন পায়েল দেবী। আর শান্তিপুর স্টেশনে ট্রেন ঢুকলে রেল পুলিশের তৎপরতা এবং সহযোগিতায় মা ও সন্তানকে শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তারা দুজনেই সম্পূর্ন সুস্থ আছেন।