শেষমেশ বাংলার মেয়ে’কেই ফিরিয়ে আনল বঙ্গ জনতা, বাঙলার বুকে গেরুয়া শিবিরের চক্রব্যূহ ছারখার।
এবার ২০০ পার’-এই স্লোগান দিয়ে বঙ্গে প্রচার করেছিল বিজেপি। বাস্তবে দেখা গেলো ঠিক উল্টো, ২০০ – এর বেশী আসন নিয়ে দাপটের সঙ্গে ক্ষমতায় ফিরলেন ‘বাংলার মেয়ে’। অবশ্য নির্বাচনী ভোটপ্রচারের সময় যে নন্দীগ্রাম কে হাতিয়ার করে মমতা বন্দোপাধ্যায় লড়েছেন এবং বহুবার বিরোধী শিবিরের কটাক্ষের শিকারও হয়েছেন, সেই নন্দীগ্রামে অবশ্য হেরে যান তিনি। এতে অবশ্য তৃণমূলের জয়ের গতিতে কোনো বাধা আসেনি। মমতা বন্দোপাধ্যায়ের স্লোগান ‘বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়’ কে নেতৃত্ব করে ঐতিহাসিক জয় ছিনিয়ে এনেছে তৃণমূল। আগেরবারের তুলনায় তৃণমূল আসন সংখ্যার নিরিখেও যেমন এগিয়েছে, তেমনই প্রাপ্ত ভোটের শতাংশেও রেকর্ড তৈরি হয়েছে। বার বার বঙ্গে এসে প্রচার করেও নরেন্দ্র মোদী- অমিত শাহের বঙ্গ জয়ের স্বপ্নের উড়ান মুখ থুবড়ে পড়ল।
আসন জয়ের নিরিখে রাত ১ টা ৫ মিনিট পর্যন্ত তৃণমূলের তৃণমূল ২০৫ টি আসনে জিতে গিয়েছেন। ৮ টি আসনে তারা এগিয়ে আছে। বিজেপি ৭৪ টি আসনে জিতে গেছে। ৩টি আসনে এগিয়ে।
তৃণমূলের এই বিশাল জয়ের কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে উঠে আসছে বেশ কয়েকটি ব্যাপার। যে সব কারণেই তৃণমূলকে বাংলাবাসী এমন ঢেলে ভোট দিয়েছেন বলে মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। এছাড়া বাংলার উন্নয়ন নিয়েও জনতা জনার্দনের রায় তৃণমূলের পক্ষেই গেছে বলেই মনে করা হচ্ছে। বিধানসভা ভোটের আগ দিয়ে চালু করা স্বাস্থ্যসাথীর ইত্যাদির মতো প্রকল্পের সুফলও পেয়েছে তৃণমূল। সাথে সাথে সবুজসাথী, কন্যাশ্রী, অনলাইন পড়াশুনার জন্যে পড়ুয়াদের ট্যাব কেনার টাকা, কৃষকবন্ধু প্রকল্প ইত্যাদি প্রকল্প গুলিও জনতার মন জয়ের অন্যতম কারন হয়ে উঠেছে। এছাড়াও মহিলাদের একটা বড় অংশ মমতা ম্যাজিকেই আস্থা রেখেছেন। বিধানসভা ভোটের পূর্বে রাজ্যজুড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রচারে বারবার আবেদন করেন মহিলা ভোটের লক্ষ্যে। সেই আবেদনে সারা দিয়েছেন মহিলারা।
এছাড়াও এবারের ভোটে বহিরাগত ইস্যুকেও হাতিয়ার করেছে তৃণমূল। দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ ইত্যাদি নানা রাজ্য থেকে কেন্দ্রীয় নেতা-মন্ত্রীরা ভোটপ্রচারে বার বার বঙ্গ সফর করেছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা ইত্যাদি নানা শীর্ষনেতারা রাজধানী থেকে বাংলায় এসেছেন। তাঁদেরকে রুখতে বার বার এদের বহিরাগত বলে নিশানা করেছে তৃণমূল। সাধারণ মানুষের মনে হয়ত বা এই বহিরাগত তত্ত্ব কাজ করেছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
এই সব কারণেরই সম্মিলিত ফলই তৃণমূলের বাজিমাত। তাই বিজেপির সোনার বাংলা গড়ার ডাককে অগ্রাহ্য করে তৃণমূলেই আস্থা রাখল বাংলার জনতা। পরিবর্তন নয়, বাংলার রায় গেলো প্রত্যাবর্তনেই!