পৃথিবীর ইতিহাসে সর্ববৃহৎ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছিল চীনের কমিউনিস্ট নেতা মাও সে তুং। প্রায় ৬৫ কোটি চড়ুই পাখি খুন হয়েছিল সেইসময় লাল চীনে। এর পোশাকি নাম ছিল ‘দ্য গ্রেট স্প্যারো ক্যাম্পেইন’।
মাও সরকারের কোপানলে পড়েছিল সামান্য চড়ুই পাখিও। মাও সে-তুং ১৯৫৮ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত চীনে ‘গ্রেট লিপ ফরওয়ার্ড’ নামে এক আন্দোলন শুরু করেন। মাও বলেন, ইঁদুর, মশা, মাছি আর চড়ুই পাখি হলো মানুষের শত্রু। এসব মেরে ফেলতে হবে। মাওয়ের কথায় চীনের সবাই ইঁদুর, মশা, মাছি আর চড়ুই পাখি মেরে ফেলতে শুরু করল। সেনাসদস্য থেকে সাধারণ মানুষ, সবাই অংশ নিল এতে। কীভাবে চড়ুই পাখি মারা যায়, তা নিয়ে রীতিমতো গবেষণা পর্যন্ত চলেছিল। চীনের মানুষেরা ড্রাম আর থালা হাতে রাস্তায় নেমে পড়ত, চড়ুই দেখলেই বাজানো শুরু করতো। প্রবল বাদ্যযন্ত্রের শব্দে সহজেই ভীত হয়ে পালাতো চড়ুই পাখি। চারপাশের ক্রমাগত আওয়াজে একসময় দুর্বল হয়ে হৃদপিণ্ড থেমে যেত ছোট্ট পাখিগুলোর। কান্ট্রি ইকোনোমি ডট কম অনুযায়ী, ১৯৫৮ সালে চীনের জনসংখ্যা ছিল ৬৫৯,৯৪৩,০০০।
চিনাদের এমন নির্বোধ কর্মকাণ্ডের খেসারত দিতেও বেশি সময় কিন্তু লাগেনি। ধেয়ে এলো প্রকৃতির নির্মম আঘাত। প্রথমত, শস্য দানার পাশাপাশি চড়ুই পাখি নানা ধরনের পোকামাকড়ও খায়। চড়ুই পাখি বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ায় জ্যামিতিক হারে বেড়ে গেল সেসব পোকামাকড়ের সংখ্যা। পাশাপাশি পঙ্গপাল সহ ফসলের ক্ষেত ছেয়ে যেতে লাগলো ক্ষতিকর পোকামাকড়ে। ফলস্বরূপ যে শস্য বাঁচানোর জন্য এত কিছু করা হল, সেই শস্য গিয়েছিল পোকামাকড়ের পেটে।
খুব অল্প সময়ের মধ্যেই শস্যভাণ্ডার খালি হয়ে গেল। সাধারণ মানুষের মজুদ করা খাদ্যেও ঘাটতি দেখা দিলো। খাদ্য সংকটের মুখে পড়লো কোটি কোটি মানুষ। দেখা দিলো দুর্ভিক্ষ। এ দুর্ভিক্ষ ‘দ্য গ্রেট ফেমিন’ নামে পরিচিত। এই দুর্ভিক্ষে প্রাণ হারান প্রায় দেড় কোটি মানুষ। শেষমেশ চিন সরকার সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে কয়েক লাখ চড়ুই আমদানি করতে বাধ্য হয়েছিল। এই চড়ুই সারা দেশে ছড়িয়ে দিয়ে চীন আস্তে আস্তে এই প্রাকৃতিক বিপর্যয় সামাল দিতে সক্ষম হয়েছিল। সেই সঙ্গে বিদেশ থেকে সর্বোচ্চ চড়ুইপাখি আমদানি করার মত অদ্ভুত আরেক রেকর্ডেরও জন্ম দেয় মাও সে তুংয়ের চীন।