হিন্দু পৌরাণিক কাহিনী মতে মা যশোদা কৃষ্ণের পালিত মাতা। জন্ম না দিলেও তিনি কৃষ্ণকে মায়ের মতো করে প্রতিপালন করেছিলেন। তার স্বামীর নাম ছিল নন্দ। নন্দপত্নী যশোদা শ্রী কৃষ্ণকে নিজের পুত্র রূপেই পালন করেন।
শ্রী কৃষ্ণের উপস্থিতি ‘মহাভারত’-এ প্রথম পাওয়া যায় দ্রৌপদীর স্বয়ম্বর সভায়। তিনি তখন যুবক বয়সে। যশোদা সমেত কৃষ্ণের বাল্যলীলা থেকে অন্তিম লীলা পর্যন্ত ঘটনাকে এক জায়গায় একত্রিত করেছেন ‘শ্রীমদ্ভাগবত্’। কংসকে বধ করার জন্য শ্রী কৃষ্ণ নিজের পালক পিতা মাতা যশোদা নন্দ কে ছেড়ে মথুরাতে যায়। শ্রী কৃষ্ণের জীবনের উপাখ্যান নিয়ে প্রায় সকল মানুষের মনেই একটা প্রশ্ন আছে যে শ্রী কৃষ্ণ ছেড়ে আসার পর কী হয়েছিল কৃষ্ণের পালিকা মা যশোদা ও পালক পিতা নন্দরাজার?
এই কাহিনীর উল্লেখ আছে ‘শ্রীমদ্ভাগবত্’। সেখানে শ্রীমদ্ভাগবত্ -এ বলা আছে ‘মহাভারত’-এর কৃষ্ণকে আবার ফিরিয়ে আনা হয় গোকুলে-বৃন্দাবনে। কৃষ্ণ ফিরে আসেন তাঁর ছোটবেলার লীলাভূমিতে। কিন্তু কৃষ্ণের বৃন্দাবনে ফিরে আসার আগে অবশ্য নন্দ ও যশোদার সঙ্গে শ্রী কৃষ্ণের জন্মদাতা মাতা পিতার সাক্ষাতের কথা ‘শ্রীমদ্ভাগবত্’ এ উল্লেখিত আছে। কুরুক্ষেত্র যাওয়ার পথে কৃষ্ণও যাদবদের সঙ্গে ছিলেন। বর্ণিত আছে এক আবেগে ভরা পুনর্মিলন। নন্দ ও বসুদেব একে অপরকে আলিঙ্গন ও সন্মধোন করেন। দেবকী এবং যশোদা একে অন্যের সুখ-দুঃখ ইত্যাদি ভাগ করে নেন। শুধু তাই নয় এর পরেও একবার কৃষ্ণ আবারও ফিরে এসেছিলেন তাঁর পালিকা মাতা যশোদার কাছে। ‘শ্রীমদ্ভাগবত্’ লেখা অনুসারে, তখন যশোদা মৃত্যু শয্যায়। কৃষ্ণ এসে দাঁড়ান তাঁর পাশে। যশোদা বলেন, তাঁর নিজের পুত্র কৃষ্ণের প্রতি একটি আক্ষেপ পূর্ন অভিযোগ রয়েছে। কৃষ্ণ জানতে চান, কী তার সেই অভিযোগ। তখন মা যশোদা জানান, তিনি কৃষ্ণের কোনও বিবাহই উপস্থিত হয়ে নিজের চোখে দেখতে পারেননি। কৃষ্ণের বিবাহানুষ্ঠান দেখতে না পারাটাই তাঁর জীবনের সব থেকে বড় আক্ষেপ।
এই কথা জানতে পেরে কৃষ্ণ বিচলিত হন। তিনি মা যশোদাকে কথা দেন, এই জন্মে তাঁর ছেলের বিবাহ দেখার সাধ পূরণ না হলেও পরের জন্মে সেটি অবশ্যই হবে। তিনি বকুলদেবী রূপে জন্মগ্রহণ করবেন এবং নারায়ণের অবতার বেঙ্কটেশ্বেরের বিবাহ নিজের চোখে দেখবেন। কৃষ্ণের বক্তব্যে যশোদা পরম শান্তিতে ইহোলোক ত্যাগ করেছিলেন।