এক নতুন ভয়ের উদয় হয়েছে, সুচের ভয়। অনেকেই টিকাকেন্দ্রের থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে রাখছেন নিজেদের। চিকিৎসকরা বলছেন এই রোগ মানুষের মধ্যে প্রায় অনেকের থেকেই, খুব চেনা। একে চিকিৎসা পরিভাষায় বলে ট্রাইপ্যানোফোবিয়া (Trypanophobia)। একদম সোজা কথায়, মানুষের এখন ইঞ্জেকশনের সূঁচে নতুন আতঙ্ক! প্রায় ২ কোটি ৯০ লক্ষ জনের পশ্চিমবঙ্গে এখনও পর্যন্ত টিকাকরণ সম্ভব হয়েছে। কিন্তু এই সংখ্যাটা অবশ্যই আরও বাড়তে পারত। এর পিছনে ইঞ্জেকশনের সূঁচ আতঙ্ককই অন্যতম কারণ বলছেন ডাক্তাররা।
বেশ কিছু জায়গায় একটু ভিড় থাকলেও, হলফ করে বলা যায় যে অগুনতি ভ্যাকসিনেশন সেন্টার (Vaccination Centre) মাছি তাড়াচ্ছে। অধিকাংশ পরিবারে বাড়ির লোকের অভিযোগ, জোর করে ভ্যাকসিনেশন সেন্টারে পাঠানো যাচ্ছে না অনেককেই। আরজিকর মেডিক্যাল কলেজের (RG Kar Medical College & Hospital) সাইকিয়াট্রিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. দিব্যগোপাল মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, মানুষের ইনজেকশনের সুচে ভয় অত্যন্ত চেনা। হাসপাতালে নাকি বরাবর এমন অনেক রোগীই আসেন। তারা ইঞ্জেকশন কিছুতেই ফোটাতে দেবেন না। এদেরকে বুঝিয়ে ইনজেকশনের ভয় কাটিয়ে ইঞ্জেকশন দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। কারণ, টিকা নিতেই হবে করোনাকে ঠেকাতে হলে।
খুব পুরনো অসুখ নয় ইঞ্জেকশন আতঙ্ক বা ট্রাইপ্যানোফোবিয়া। এই অসুখকে ১৯৯৪ সালে চিনতে পারেন সাইক্রিয়াটিস্টরা। সমীক্ষা প্রায় পুরো দুনিয়াজুড়ে শুরু হয়। তাতেই দেখা গিয়েছে ইংল্যান্ডে একজন ইঞ্জেকশন আতঙ্কে ভোগেন প্রতি চারজনে। ট্রাইপ্যানোফোবিয়ায় আমেরিকার মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশ মানুষ ভুগছেন। সংখ্যাটা বড় কম নয় এ রাজ্যে আলাদা করে কোনও সমীক্ষা না হলেও বলেই মনে করছেন চিকিৎসকরা। কারণ ২০১৯ সালের এক সমীক্ষা বলছেন গড়ে প্রতি ১০ জনে একজন সূঁচ আতঙ্কে ভোগেন। সেই হিসেবে ৮০ লক্ষ মানুষ এই ইঞ্জেকশন আতঙ্কে ভুগছেন বাংলার।
পাভলভ মানসিক হাসপাতালের সুপার চিকিৎসক গণেশ প্রসাদ খোদ নিজের হাসপাতালে টিকা দিতে গিয়ে ইঞ্জেকশন (Injection) আতঙ্কের সম্মুখীন হয়েছিলেন। তাঁর বক্তব্য, “হাসপাতালের আবাসিকদের টিকার সূঁচ ফোটাতে গররাজি ছিলেন অনেকেই। বোঝাতে হয়েছে তাঁদেরকে। এটা অত্যন্ত সামান্য ব্যাপার বলেছি। খুব জোর মশার কামড়ের মতন। এই ফোবিয়ায় যে সমস্ত লোকেরা আক্রান্ত তাঁদেরকেও এভাবেই বোঝাতে হবে।” এর থেকে বেরনোর উপায় দেখছেন না চিকিৎসকরা গল্প করা আর টিকা দেওয়া ছাড়া। আরজিকর হাসপাতালের সাইকিয়াট্রিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. দিব্যগোপাল মুখোপাধ্যায়ের মতে গোমড়ামুখো ভ্যাকসিনেটর দিয়ে সে কাজ সম্ভব নয়। তাঁর কথায়, অনেকে মুখ গোমড়া করে থাকেন টিকা দেওয়ার সময়। গল্পের ছলে টিকা দিতে পারলে ফোবিয়া তবেই কাটানো যাবে। বেসরকারি ক্ষেত্রে নানান পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে এমন ফোবিয়া কাটাতে। কোথাও কোথাও সূঁচ ফোটানোর জায়গায় ভ্যাকসিনেটর ইএমএলএ অথবা অ্যানাস্থেটিক ক্রিম লাগিয়ে দিচ্ছেন । কোথাও বা নাইট্রাস অক্সাইড বা লাফিং গ্যাস দেওয়া হচ্ছে। যে গ্যাস স্প্রে করলে ফুরফুরে মেজাজে থাকেন টিকা গ্রাহক আতঙ্ক কেটে গিয়ে।